মেয়ের খেলা আছে, তাই জমির কাজ অন্য দিনের তুলনায় একটু দ্রুত শেষ করেন মনিকা চাকমার মা রবিমালা চাকমা। ঘরে ফিরেই টেলিভিশনের সামনে বসেন তিনি। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। খেলার শুরু দিকেই মনিকার গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর নেপাল সমতা ফেরালেও শেষ হাসি হাসে মনিকারাই। নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয় করে। বাংলাদেশ জেতার আনন্দে আত্মহারা মনিকার মা রবিমালা ছুটে যান মিষ্টির দোকানে। মিষ্টি, বিস্কুট কিনে এলাকার সবাইকে খাইয়েছেন তিনি।
খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা পরিষদ থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে সুমন্তপাড়ায় মনিকাদের বাড়ি। গতকাল থেকেই সেখানে বইছে খুশির হাওয়া। কেবল সুমন্তপাড়ায় নয়, গোটা লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় এখন উৎসবের আমেজ। গতকাল অনেক জায়গায় মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। মনিকার নামে স্লোগানও দিয়েছেন এলাকাবাসী।
খাগড়াছড়ি থেকে পাঁচ কিলোমিটার মোটরসাইকেলে ও দুই কিলোমিটার হেঁটে পৌঁছাতে হয় সুমন্তপাড়ায়। পাড়ায় ৭০টির মতো পরিবারের বসবাস। আজ সকাল থেকেই সেখানে অন্য রকম পরিবেশ। সাফ জয় নিয়ে সবখানেই আলোচনা। আর মনিকা চাকমার বাড়ির সামনে রীতিমতো মানুষের ভিড়।
মনিকা চাকমার মা রবিমালা চাকমা বলেন, ‘খুব আনন্দ লাগছে বাংলাদেশ জিতেছে বলে। এই দলে আমার মেয়ে খেলেছে, গোলও করেছে একটা, ভাবতেই আনন্দ লাগছে। খেলা দেখে মিষ্টি, বিস্কুট কিনে এনে সবাইকে খাইয়েছি। এখন মেয়ের জন্য দোয়া চাই।’
মনিকার বাবা বিন্দু কুমার চাকমার চোখে আনন্দের অশ্রু। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ছোট থেকে মেয়েকে ভালোমন্দ খাওয়াতে পারিনি। ভালো পরিবেশ দিতে পারিনি। অথচ এ মেয়ের কল্যাণে আজ সুখে আছি, সমাদর পাচ্ছি। কোথাও গেলে লোকজন ডেকে মেয়ের কথা জানতে চায়। এর চেয়ে সুখের কী আছে।’
মনিকাদের বাসায় আসা প্রতিবেশীরাও বললেন, তাঁদের এই ছোট্ট গ্রামটির কথা এখন অনেকেই জানে। তবে এর মধ্যে আছে আক্ষেপও। এক প্রতিবেশী বললেন, প্রতিবার মনিকাদের খেলা হলেই গ্রামে জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা আসেন। তাঁরা বিদ্যুৎ সংযোগ, রাস্তা তৈরি করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু সেটা আশ্বাসই থেকে যায়।
এর আগে ২০১৯ সালে ফিফার দর্শক জরিপে সেরার তালিকায় ওঠে মনিকার একটি গোল। ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরালও হয় অনূর্ধ্ব-১৯ আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপের সেমিফাইনালে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে মনিকার গোলটি। মনিকা যে আরও অনেক দূর যাবে, এমনটাই বিশ্বাস সুমন্তপাড়ার মানুষজনের।