নেত্রকোনায় দাম্পত্য কলহের জেরে শ্বশুরবাড়িতে স্বামী অগ্নিদগ্ধ
নেত্রকোনার মদনে দাম্পত্য কলহের জেরে এখলাছ উদ্দিন নামের (৩৫) এক ব্যক্তি অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। আগুনে তাঁর শরীরের প্রায় ৬৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাঁকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার সকালে উপজেলার কাইটাল ইউনিয়নের বারোরী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এখলাছ মিয়ার স্বজনদের দাবি, ঝগড়ার একপর্যায়ে এখলাছের স্ত্রী মুক্তা আক্তার (২৫) তাঁর স্বামীর শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। তবে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দাবি, এখলাছ নিজেই নিজের শরীরে আগুন দিয়েছেন।
এখলাছ মিয়া কেন্দুয়া উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের পাছহার গ্রামের আমজাদ আলীর ছেলে। স্থানীয় বাসিন্দা, পুলিশ ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ছয় বছর আগে এখলাছ মিয়া মদনের বারোরী গ্রামের মেয়ে মুক্তা আক্তারকে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন পর এখলাছ বিদেশে চলে যান। এ সময় মুক্তা তাঁর বাবার বাড়িতে ছিলেন। প্রায় বছরখানেক আগে তিনি দেশে ফিরে স্ত্রীর কাছে পাঠানো টাকার হিসাব চান। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে পারিবারিক কলহের সৃষ্টি হয়। মাস ছয়েক আগে মুক্তা আক্তার ঝগড়া করে চট্টগ্রাম চলে যান। সেখানে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। কিন্তু এখলাছের সন্দেহ তাঁর স্ত্রী অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে গেছেন—এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে।
এখলাছের শ্বশুরবাড়ির লোকজনের ভাষ্য, গত কয়েক দিন আগে মুক্তা আক্তার তাঁর বাবার বাড়িতে আসেন। খবর পেয়ে গতকাল সকাল সাড়ে সাতটার দিকে এখলাছ মিয়া শরীরে পেট্রল মেখে শ্বশুরবাড়িতে যান। সেখানে মুক্তার ঘরে দরজা লাগিয়ে ঝগড়ার একপর্যায়ে নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে তাঁকে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।
তবে এখলাছ মিয়ার ভাগ্নে মুসলেম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, এখলাছের সঙ্গে মুক্তার দীর্ঘদিন ধরে টাকাপয়সাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিবাদ চলছিল। গত রোববার রাতে এখলাছ মিয়াকে মুক্তা ফোন করে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে গতকাল সকালে এখলাছের শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন মুক্তা। তাঁর শরীরের ৭০ ভাগ পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
কাইটাইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়াম্যান মো. সাফায়েত উল্লাহ বলেন, ‘দাম্পত্য কলহের জেরে গতকাল সকালে এখলাছ মিয়া নামের এক ব্যক্তির শরীরে আগুন ধরিয়ে পুড়ানো হয়েছে বলে শুনেছি। বিষয়টি থানা–পুলিশ তদন্ত করছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মুক্তা আক্তারের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তাঁর বাবা খায়রুল মিয়া বলেন, এখলাছ মিয়া নিজে শরীরে পেট্রল মেখে বাড়িতে এসে আগুন ধরিয়ে দগ্ধ হয়েছেন। তাঁরা এখন তাঁকে নিয়ে ঢাকায় আছেন।
কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনামুল হক বলেন, গতকাল দুপুরে অগ্নিদগ্ধ এখলাছের পরিবারের লোকজন থানায় মামলা করতে এসেছিলেন। ঘটনাস্থল যেহেতু মদনে, তাই সেখানে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রোগীর শরীর যেহেতু অনেকটাই পুড়ে গেছে। তাই প্রথমে চিকিৎসা করানোর কথা বলেছেন।
মদন থানার ওসি মোহাম্মদ তাওহীদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি শোনার পর আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। মুক্তার স্বজনেরা ও কয়েকজন প্রতিবেশী জানিয়েছেন, দাম্পত্য কলহের জেরে এখলাছ নিজেই নিজের শরীরে আগুন ধরিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন দিক মাথায় রেখে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। মদন হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন তাঁর শরীরের প্রায় ৬৫ শতাংশ পুড়ে গেছে।’