কুমিল্লায় প্রবল স্রোতে ভেঙে গেছে সেতু, ভোগান্তিতে ৪৩ গ্রামের মানুষ
কুমিল্লার তিতাস উপজেলায় গোমতী নদীর ওপর নির্মীয়মাণ পাকা সেতুর পাশে নির্মিত ৭৫ মিটার দীর্ঘ কাঠের সেতুটি গতকাল বুধবার পানির স্রোতে ভেঙে পড়েছে। সেতু ভেঙে সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় নদীর দুই পারের ৪৩ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, উপজেলার ৪৩টি গ্রামের বাসিন্দাদের সহজ যোগাযোগের জন্য এক বছর আগে আসমানিয়া বাজার ও নারান্দিয়া গ্রামের মধ্যে গোমতী নদীর ওপর এই সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল।
গোমতী নদীর উত্তর–পশ্চিম পারে নারায়ণপুর, হরিপুর, রতনপুর, কদমতলী, নারান্দিয়া, তারিয়াকান্দি, তুলাতলী, তুলাকান্দি, বলরামপুর, মাছিমপুর, কলাকান্দি, দাসকান্দি, হারাইকান্দি, ভাটিবন, নয়াকান্দি, সোনাকান্দা, চরেরগাঁও, দড়িকান্দি, দুলারামপুর, হাইদনকান্দি, মানিককান্দি, জগৎপুর, খানেবাড়ি গোবিন্দপুর, বাতাকান্দি, আকালিয়া, উত্তর আকালিয়া, কালাইগোবিন্দপুর, ঐচারচর, রঘুনাথপুর গ্রাম এবং নদীর দক্ষিণ–পূর্ব পারে রয়েছে খলিলাবাদ, কাশিপুর, জাহাপুর, কালিপুর, সেম্বুপুর, গাজীপুর, সাতানি, নয়ানি, কাশিপুর, নয়াচর, দক্ষিণ নারান্দিয়া, আসমানিয়া ও খোশকান্দি গ্রাম। গ্রামগুলোতে রয়েছে একটি কলেজ, চারটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চারটি মাদ্রাসা, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন স্কুল, ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয় ও ইউপি চেয়ারম্যানের কার্যালয়।
নদীর দুই পারের মানুষের চলাচলের জন্য নির্মাণাধীন সেতুর পাশেই একটি বিকল্প সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু মুষলধারে বৃষ্টি ও গোমতী নদীর পানির প্রবল স্রোতে ওই কাঠের সেতুটি গতকাল বুধবার বিকেলে ভেঙে যায়। এতে নদীর দুই পারের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কৃষক, সাধারণ জনগণ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। তাঁরা আপাতত চার কিলোমিটার সড়ক ঘুরে দাসকান্দি দিয়ে চলাচল করছেন। নদীতে এখন প্রবল স্রোত থাকায় নৌকা বা ট্রলার চলাচল শুরু হয়নি।
তিতাস উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের চাকরিজীবী মোহাম্মদ হোসেন বলেন, গোমতী নদীর উত্তর–পশ্চিম পারের প্রায় ২৯টি গ্রামের শত শত মানুষ এই কাঠের সেতু দিয়ে যাতায়াত করতেন। গোমতী নদীতে কাঠের সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার সেতুটি ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। সেতু ভেঙে পড়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।
আসমানিয়া বাজারের দোকানদার এবং নদীর উত্তর–পশ্চিম পারের কদমতলী গ্রামের বাসিন্দা হাসানুর রহমান বলেন, কাঠের সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় বুধবার সন্ধ্যার আগ থেকে আসমানিয়া বাজারের ব্যবসায়ীদের বিক্রি প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে।
নদীর দক্ষিণ–পূর্ব পারের খলিলাবাদ গ্রামের গৃহবধূ ইসরাত জাহান বলেন, নদীর উত্তর পারে ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয় ও স্বজনদের বাড়ি। সেতু ভেঙে যাওয়ায় নদীর দক্ষিণ–পূর্ব পারের লোকজনের যাতায়াতে দুর্ভোগ বেড়ে গেছে।
ভিটিকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য মোস্তাক হোসেন বলেন, সেতু ভেঙে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নদীর উত্তর–পশ্চিম পারের অর্ধশতাধিক সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালকের আয়রোজগারও কমে গেছে।
আসমানিয়া বেগম রোকেয়া মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক মো. কিবরিয়া বলেন, সেতু ভেঙে যাওয়ায় শিক্ষার্থী ও অসুস্থ রোগীদের যাতায়াতে অতিরিক্ত দুর্ভোগ বেড়েছে।
এ বিষয়ে তিতাস উপজেলা প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পানির স্রোত কমলে কাঠের সেতুটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।