ঝিকরগাছায় যুবদল কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ২, শাস্তির দাবিতে থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ
যশোরের ঝিকরগাছায় যুবদলের কর্মী পিয়াল হাসানকে (২৮) কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ সোমবার বেনাপোল ও ঝিকরগাছা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের খবর শুনে বিকেলে তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি এবং অন্য আসামিদেরও দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে এলাকাবাসী থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। পরে ঝিকরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবলুর রহমান খান সব আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এদিকে এ হত্যা মামলার প্রধান আসামি ঝিকরগাছা পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক শামীম রেজাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি। গত ৯ নভেম্বর রাতে সংগঠনটির দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার দুজন হলেন ঝিকরগাছা উপজেলার মোবারকপুর গ্রামের মনিরুল ইসলাম (৩৭) ও একই এলাকার তুষার হোসেন (৩১)। মনিরুলকে বেনাপোল থেকে ও তুষারকে ঝিকরগাছার মোবারকপুর থেকে আজই গ্রেপ্তার করা হয়।
এ বিষয়ে ঝিকরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবলুর রহমান খান বলেন, পিয়াল হত্যা মামলার দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের খবর শুনে এলাকাবাসী থানায় এসে বিক্ষোভ করেন। পরে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়েছে।
নিহত ব্যক্তির স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট ঝিকরগাছা বাজারে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পৌর ছাত্রদলের সভাপতি শামীম রেজার সঙ্গে যুবদলের কর্মী পিয়াল হাসানের বিরোধ হয়। সেই বিরোধের জেরে পিয়ালের নেতৃত্বে কয়েকজন শামীমের বাবা কামরুল ইসলামকে ছুরি মেরে জখম করেন। ওই ঘটনায় একটি মামলা হয়। ওই মামলায় পিয়ালসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। দেড় মাস কারাভোগ করে ৮ নভেম্বর জামিনে মুক্ত হন তাঁরা। পরদিন ৯ নভেম্বর পিয়াল রেলস্টেশন এলাকায় শামীমের কাছে গিয়ে ওই ঘটনার জন্য মাফ চান। এ সময় শামীম তাঁর সহযোগীদের মুঠোফোনে ডেকে পিয়ালকে ধাওয়া দিয়ে হাতবোমা মেরে ও কুপিয়ে হত্যা করেন।
এ ঘটনায় ৯ নভেম্বর রাতে নিহত পিয়ালের বাবা কিতাব আলী বাদী হয়ে ঝিকরগাছা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় ঝিকরগাছা পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক শামীম রেজাসহ ১০ জনের পরিচয় উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয় ৬-৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।
নিহত পিয়াল ঝিকরগাছা উপজেলার মোবারকপুর বিশ্বাসপাড়া এলাকার কিতাব আলীর ছেলে। তিনি ঝিকরগাছা বাজারে মুরগির ব্যবসা করতেন। তাঁর চার বছরের একটি মেয়ে রয়েছে।
নিহত পিয়ালের ভাই সুমন হাসান বলেন, ‘পারিবারিক বিরোধ থেকেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। শামীমের বাবা আহত হওয়ার ঘটনায় অনুতপ্ত হয়ে পিয়াল গত শনিবার দুপুরে শামীমের কাছে মাফ চাইতে যায়। কিন্তু শামীম মাফ না করে তার লোকজন ডেকে কুপিয়ে ও বোমা মেরে হত্যা করেছে। আমরা খুনিদের ফাঁসি চাই।’
দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির মধ্যে দুটি পক্ষ রয়েছে। বর্তমান উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবিরা সুলতানা ও সাধারণ সম্পাদক ইমরান সামাদ এক পক্ষে এবং মোর্তজা এলাহী অপর পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নিহত পিয়াল হাসান ছিলেন বিএনপি নেতা ইমরান সামাদের অনুসারী এবং অভিযুক্ত শামীম রেজা মোর্তজা এলাহীর অনুসারী হিসেবে এলাকায় পরিচিত।