বরিশালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে তিন দিনে ৫ জনের মৃত্যু

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রোগী বাড়ছে
ফাইল ছবি

বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত তিন দিনে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল শনিবার রাত পর্যন্ত সময়ে এ পাঁচজন মারা যান। তাঁদের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে। অপর দুজন মারা যান বরগুনা ও ভোলা জেনারেল হাসপাতালে। এ নিয়ে চলতি মৌসুমে বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গুতে ১১ জনের মৃত্যু হলো।

মারা যাওয়া এই ১১ জনের মধ্যে ৯ জনই মারা যান চলতি জুলাই মাসে, একজন মারা যান গত ২৮ জুন এবং অপরজন মারা যান গত এপ্রিলে। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গতকাল রাতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বাসিন্দা হরিপদ (৮৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। এর আগে শুক্রবার রাতে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ঝালকাঠি সদরের বাউকাঠি এলাকার আজুফা বেগম (৫৫) নামের অপর এক নারী।

তার আগের দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে একই হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান পারুল বেগম (৬০) নামে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলী গ্রামের এক নারী। একই দিন বরগুনা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে মারা যান বরগুনা সদরের ফুলঢলুয়া গ্রামের আবদুর রহিম (৮০) নামের এক ব্যক্তি এবং ভোলা জেনারেল হাসপাতালে মারা যান দৌলতখান উপজেলার চরসুরভী গ্রামের হনুফা বেগম (৬০) নামের অপর এক নারী।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকাল ছয়টা থেকে আজ রোববার সকাল ছয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৩৯ রোগী, যা ১ দিনে সর্বোচ্চ। ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে বরিশালের শের-ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬৮ জন, বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে ২৯ জন, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৬, পটুয়াখালী জেলার অন্য হাসপাতালে ২৯ জন, পিরোজপুরে ৬৭, বরগুনায় ৭৮, ভোলায় ৩১ জন এবং ঝালকাঠিতে ৬ জন ভর্তি হয়েছেন। আজ নতুন–পুরোনোসহ বরিশাল বিভাগের সব হাসপাতাল মিলিয়ে ভর্তি আছেন ৮৫২ ডেঙ্গু রোগী। এর মধ্যে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ভর্তি আছেন ২৩৮ জন।

বরিশাল বিভাগে চলতি জুলাইয়ে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। হাসপাতালগুলোয় রোগী সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। আগে বেশির ভাগ রোগীর ঢাকাসহ অন্যান্য স্থানে ভ্রমণের ইতিহাস থাকলেও এখন বেশির ভাগ রোগীই স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। এরই মধ্যে পিরোজপুরের নেছারাবাদ ও পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে নমুনা পরীক্ষা করে এডিস মশার লার্ভা শনাক্ত করেছেন কীটতত্ত্ববিদেরা। এতে পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হওয়ায় উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য বিভাগ।

ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া কয়েকজনের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। বরগুনার পাথরঘাটা উপেজলার কাঁঠালতলী ইউনিয়নের পারুল বেগম (৬০) বৃহস্পতিবার বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পারুল বেগমের ছেলে সফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মা দুয়েক বছরে বাড়ির বাইরে কোথাও ভ্রমণ করেননি।। মঙ্গলবার রাতে বরিশালে আনা হলে বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি মারা যান। এর আগে ২৮ জুন বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গুতে মারা যান বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানি এলাকার নাসিমা বেগম (৩৫) নামের আরেক নারী। তাঁর পরিবারের ভাষ্য, নাসিমা বেগম এক বছরের মধ্যে অন্য কোথাও ভ্রমণ করেননি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, চলতি মাসে মৃত্যুর পাশাপাশি ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এতে দেখা যায়, বরিশাল বিভাগে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আজ সকাল পর্যন্ত ৫ হাজার ৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন ৪৩৩ জন। চলতি জুলাই মাসের ২৯ দিনেই আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৫৭৩ জন, যা মোট রোগীর ৯১ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ডেঙ্গুতে রোগী ও মৃত্যু উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। হাসপাতালগুলোর চিকিৎসার পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। তবে অন্য রোগীদের পাশাপাশি প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হওয়ায় পরিস্থিতি মোকাবিলায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশেষ করে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে। তারপরও স্বাস্থ্য বিভাগ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সাধ্যমতো চেষ্টা চালাচ্ছে।