নোয়াখালীতে সাংবাদিক হেনস্তার প্রতিবাদে মানববন্ধন

নোয়াখালীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলাকালে সাংবাদিক লাঞ্ছিতের প্রতিবাদে সাংবাদিকদের মানববন্ধন। বৃহস্পতিবার সকালে নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

নোয়াখালী শহরের মাইজদীতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে অভিযানের সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে এক সাংবাদিককে হেনস্তার প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সামনে জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে হেনস্তাকারী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের শাস্তির দাবি জানানো হয়।

এর আগে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় মাইজদীর প্যানকেয়ার হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহসান হাফিজের সামনে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল দেশ টিভির প্রতিনিধি খায়রুল আনম ওরফে রিফাতকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মালেক ওরফে মানিক। তিনি খায়রুলের মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় কর্তব্যরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

ভোরের কাগজ পত্রিকার নোয়াখালী প্রতিনিধি মোহাম্মদ সোহেলের সঞ্চালনে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি বখতিয়ার শিকদার, সাবেক সহসভাপতি শাহ ওসমান, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের নিজস্ব প্রতিবেদক আবু নাছের মঞ্জু, দৈনিক সফল বার্তার সম্পাদক লিয়াকত আলী খান, ইউএনবির প্রতিনিধি মেজবাউল হক, একাত্তর টেলিভিশনের প্রতিনিধি মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিনিধি আকবর হোসেন। মানববন্ধনে জেলায় কর্মরত প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকেরা অংশ নেন।

সাংবাদিক লাঞ্ছিতের নিন্দা জানিয়ে বক্তারা বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম চলাকালে সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গেছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি; শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে। তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ প্রমাণ করে, তারা সাধারণ রোগীদের কীভাবে জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নেয়। তাই চিকিৎসক ও নার্সবিহীন ওই হাসপাতালের মালিকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

অভিযোগের বিষয়ে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মালেক প্রথম আলোকে বলেন, রোগী আটকে টাকা আদায়ের অভিযোগ সঠিক নয়। তবে আইসিইউতে সমস্যা ছিল বলে তিনি স্বীকার করেন। সাংবাদিক লাঞ্ছিতের বিষয়ে তিনি বলেন, অভিযানের সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ওই সাংবাদিক সেখানে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন। তাঁকে কোনো ধরনের মারধর করা হয়নি।

হাসপাতালের আইসিইউ ও এক্স-রে বিভাগ বন্ধ

নোয়াখালী বেসরকারি প্যানকেয়ার হাসপাতাল
ছবি: প্রথম আলো

এদিকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) পরিচালনার শর্ত ভঙ্গের দায়ে বেসরকারি প্যানকেয়ার হাসপাতালের আইসিইউ ও এক্স-রে বিভাগের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত এ নির্দেশ দেন। এ ছাড়া ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, গত শুক্রবার নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার আমকি গ্রামের বাবর আহম্মদ (২৪) নামের এক তরুণ বিষপান করেন। ওই দিন দিবাগত রাত একটার দিকে তাঁকে নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনেরা। ভোরে হাসপাতালের এক দালালের মাধ্যমে ওই রোগীর স্বজনদের ফুসলিয়ে পাশের বেসরকারি প্যানকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যান। পরদিন বিকেলে চিকিৎসক রোগীকে বাড়ি নিতে বললে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৪৭ হাজার টাকা বিল দাবি করে। কিন্তু রোগীর স্বজনেরা ২৫ হাজার টাকা দিয়ে ‘গরিব রোগী আর টাকা নাই’ বললে হাসপাতালের লোকজন রোগীকে আটকে দেন। পরদিন রোববার রোগীর স্বজনেরা আরও পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, রোগী সদর হাসপাতালে আছে। সেখানে গিয়ে স্বজনেরা মেঝেতে ওই রোগীর লাশ পড়ে থাকতে দেখেন।

এ ঘটনায় জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি প্যানকেয়ার হাসপাতালের আইসিইউ পরিচালনাসহ নানা অসংগতির প্রমাণ পান। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিলের পর গতকাল সন্ধ্যায় হাসপাতালটিতে অভিযান চালানো হয়।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহসান হাফিজ প্রথম আলোকে বলেন, অভিযানের সময় ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটিতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, নার্স পাওয়া যায়নি। আইসিইউ বিভাগে সার্বক্ষণিক একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও ছিলেন না। তখনো একজন মুমূর্ষু রোগী আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। এ ছাড়া নানা অসংগতি পাওয়া গেছে। এ কারণে আইসিইউ ও এক্স-রে কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

সিভিল সার্জন মাসুম ইফতেখার প্রথম আলোকে বলেন, বেসরকারি প্যানকেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নীতিমালা ভঙ্গ করায় আইসিইউ ও এক্স-রে বিভাগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ওই হাসপাতালে বিধিবহির্ভূতভাবে একজন রোগীকে আইসিইউতে ভর্তি এবং পরে টাকার জন্য রোগীকে আটকে রাখার অভিযোগ তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে প্রমাণিত হয়েছে।