৪ ঘণ্টা পর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ শিক্ষার্থীকে প্রক্টরের জিম্মায় ছেড়ে দিল পুলিশ
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়কসহ ১২ শিক্ষার্থীকে আটকের প্রায় চার ঘণ্টা পর ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। বন্দর থানা থেকে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে ছাড়িয়ে আনেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আবদুল কাইয়ুমসহ সাত শিক্ষক।
এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সারা দেশে ছাত্রহত্যা ও শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদ এবং বিভিন্ন দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ছাত্র-শিক্ষক সংহতি সমাবেশ’ কর্মসূচি পালনের জন্য জড়ো হন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সমাবেশ শুরুর আগে দুপুর ১২টার দিকে ওই ১২ জন শিক্ষার্থীকে হেফাজতে নিয়েছিল পুলিশ।
১২ শিক্ষার্থীকে নিজের জিম্মায় মুক্ত করার কথা প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন প্রক্টর আবদুল কাইয়ুম। একই সঙ্গে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রহমান মুকুলও বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, সারা দেশে ছাত্রহত্যা, শিক্ষক লাঞ্ছনা, শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার, হয়রানির প্রতিবাদে আজ বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় ‘ছাত্র-শিক্ষক সংহতি সমাবেশ’ হওয়ার কথা ছিল। এ উপলক্ষে সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক আটকে দেওয়া হয় এবং সেখানে অবস্থান নেয় পুলিশ। বৃষ্টির কারণে সমাবেশ শুরু করতে দেরি হয়। দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে যান। তখন সেখান থেকে ১২ জনকে আটক করে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর থানায় নেওয়া হয়।
আটক শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুজয় শুভ, অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ভূমিকা সরকার ও অ্যাকাউন্টিং বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান সজীব। আটক অন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ইংরেজি বিভাগের অনিকা সিঁথি, সিবাত আহমেদ, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুজন মাহমুদ, অর্থনীতি বিভাগের শেখ ইমন, রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ইয়ামিন, আরমান জাওহান আবির, মো. রাকিব, পরিবেশ ও মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তমাল এবং পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মাহফুজুর রহমান।
শিক্ষার্থীরা জানান, ১২ শিক্ষার্থীকে পুলিশ আটক করে হেফাজতে নেওয়ার পর পুলিশ ও ছাত্রলীগ পরিচয় দেওয়া একদল শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরের মহাসড়কে অবস্থান নেওয়ায় পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি পালন করা যায়নি।
বরিশাল নগর পুলিশের বন্দর থানার ওসি আবদুর রহমান মুকুল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, কারফিউ চলাকালে সভা-মানববন্ধনসহ জনসমাগম নিষিদ্ধ। এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে জড়ো হচ্ছিলেন। তাঁদের ওপর আক্রমণ ও বাধা আসতে পারে—এই আশঙ্কায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছিল। বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং কয়েকজন শিক্ষকের জিম্মায় তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
প্রক্টর আবদুল কাইয়ুম বলেন, ‘আমরা হেফাজতে নেওয়া শিক্ষার্থীদের থানা থেকে নিয়ে এসেছি। তাঁরা তাঁদের বাসায় ফিরে গেছেন। ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে।’
এর আগে গতকাল বুধবার দুপুরে বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নগরের সদর রোডে জড়ো হয়ে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে বাদানুবাদ ও ধস্তাধস্তি হয়। পরে পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে শিক্ষার্থীরা নগরের ফজলুল হক অ্যাভিনিউ এলাকায় পুনরায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করলে সেখানেও আরেক দফা লাঠিপেটা করা হয়। এ সময় কয়েকজন সাংবাদিকসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। পুলিশ ওই এলাকা থেকে ১০ জন ছাত্র ও ৩ জন ছাত্রীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে কোতোয়ালি মডেল থানা থেকে তাঁদের সবাইকে অভিভাবকদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।