আড়াইহাজারে মা ও ছয় বছর বয়সী মেয়ের ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপকারী গ্রেপ্তার না হওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নারায়ণগঞ্জের নাগরিক সমাজের নেতারা। অবিলম্বে অভিযুক্ত খোকন মিয়াকে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
আজ বুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে ‘অ্যাসিড নিক্ষেপকারীর শাস্তির দাবিতে’ আয়োজিত মানববন্ধনে নারায়ণগঞ্জের নাগরিক সমাজের নেতারা এ দাবি জানান। প্রথম আলো ট্রাস্ট অ্যাসিডদগ্ধ নারীদের জন্য সহায়ক তহবিল ও প্রথম আলো নারায়ণগঞ্জ বন্ধুসভা এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।
প্রথম আলোর নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি মজিবুল হকের সভাপতিত্বে ও সংবাদদাতা গোলাম রাব্বানীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন প্রথম আলো বন্ধুসভার উপদেষ্টা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শঙ্কর, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলার লিগ্যাল এইড সম্পাদক শাহানা বেগম, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের জেলা সভাপতি মিমি পূজা দাস, নারী সংহতি নারায়ণগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক নাজমা বেগম ও প্রথম আলো নারায়ণগঞ্জ বন্ধুসভার সভাপতি মনিকা আক্তার।
রফিউর রাব্বি বলেন, অপরাধ সংঘটিত হলে পুলিশের দায়িত্ব অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা। থানায় এজাহার দিতে কে এলো, এলো না, এটি মুখ্য বিষয় নয়। এজাহার না দিলে পুলিশ অপরাধীকে গ্রেপ্তার করবে না, এটি সুস্থ সমাজে হতে পারে না। সমাজে যখন শৃঙ্খলা থাকে না, বিচারব্যবস্থা ধূলিসাৎ হয়ে যায়, তখন এমনটা হয়। মানুষ যখন জানে, অপরাধ সংঘটনের পর তাকে আইনের আওতায় আসতে হবে না, তখন প্রতিনিয়ত অপরাধ সংঘটিত হতে থাকে।
রফিউর রাব্বি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশের পুলিশ প্রশাসনে যাঁরা আছেন, তাঁরা মনে করেন, তাঁদের দায়িত্ব সরকারের নিরাপত্তা দেওয়া ও বিরোধী মতকে দমানো। তাঁরা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দেওয়াকে দায়িত্ব মনে করেন না। এ কারণে সমাজে রাজনৈতিক দল ও প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায় অপরাধ হলেও তাঁরা দেখেও না দেখার ভান করেন। পুলিশের ব্যর্থতার কারণে খুনি, চাঁদাবাজেরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।’
বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে দেশে অপরাধ বাড়ছে উল্লেখ করে এ বি সিদ্দিক বলেন, নারী ও শিশুর ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপ করা হলেও অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হয়নি। এতে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠে। জনগণের টাকায় প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন হয় হলেও তাঁরা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। অ্যাসিড–সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আবারও আন্দোলনে গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
একজন রাজমিস্ত্রি কী করে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানের ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপের সাহস করেন প্রশ্ন তুলে ভবানী শংকর বলেন, পুলিশ কেন ১০ দিন পর মামলা নিল। কেন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হলো না। এটি খতিয়ে দেখতে হবে, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের জেলা সদস্যসচিব সুলতানা আক্তার, ছাত্র ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি ফারহানা মানিক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের জেলা সভাপতি মুন্নি সরদার, প্রথম আলো বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি আফরিন সুলতানা, সাব্বির আল ফাহাদ, উজ্জল উচ্ছ্বাস, সাধারণ সম্পাদক নয়ন আহমেদ।
গত ২৩ জুন রাতে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার গোপালদী পৌরসভার গায়েনপাড়া এলাকায় গৃহবধূ ও তার ছয় বছর বয়সী মেয়েকে অ্যাসিড নিক্ষেপ করা হয়। এতে গৃহবধূর পা ও তার মেয়ের মুখ ঝলসে যায়। তাদের গুরুতর অবস্থায় রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার ওই গৃহবধূর মা বাদী হয়ে আড়াইহাজার থানায় আবেদন করলেও ১০ দিন পর মামলা নেয় পুলিশ। ১২ দিনেও আসামি খোকন মিয়াকে (গৃহবধূর স্বামী) গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।