টঙ্গীতে ওষুধ কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভ, কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ
কারখানায় শ্রমিক ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্তকরণ, বেতন বৃদ্ধি, পরিবারের চিকিৎসা ভাতাসহ বিভিন্ন দাবিতে গাজীপুরের টঙ্গীতে রাত থেকে টানা বিক্ষোভ করছেন একটি ঔষধ উৎপাদন কারখানার শ্রমিকেরা। গতকাল বুধবার রাত ৯টার দিকে শুরু হয় এ বিক্ষোভ। এতে কারখানাটির ভেতর অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন কয়েকজন কর্মকর্তা।
ওই ওষুধ কারখানার নাম পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি। এটি টঙ্গীর হকের মোড় এলাকায় অবস্থিত। কারখানার বিভিন্ন বিভাগে কাজ করেন প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক।
ওই কারখানার কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কারখানার ভেতর শ্রমিক ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্তকরণ, বেতন বৃদ্ধি, সব স্থায়ী শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের জন্য চিকিৎসা ভাতা নির্ধারণসহ মোট ১৮ দফা দাবিতে গত ২৫ আগস্ট বিক্ষোভে নামেন শ্রমিকেরা। এ সময় কারখানা কর্তৃপক্ষ তাঁদের ১১টি দাবি মেনে নেয়। বাকি দাবিগুলোও দ্রুত মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেয়। কিন্তু এরপর ১৭ দিন পার হয়ে গেলেও বাকি দাবি মেনে না নেওয়ায় বা এ ব্যাপারে কারখানা কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে আবারও বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। একপর্যায়ে রাত ৯টার দিকে কারখানার কয়েকজন কর্মকর্তাকে ভেতরে রেখে ফটক বন্ধ করে দেন শ্রমিকেরা।
পুলিশ ও কারখানার শ্রমিক সূত্রে জানা যায়, গতকাল সন্ধ্যায় কারখানা ছুটি শেষে শ্রমিকেরা কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে বাকি ছয়টি দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো মেনে নিতে বলেন। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ এসব দাবি মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এতে শ্রমিকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে কর্মকর্তাদের কারখানার ভেতরে রেখে মূল ফটক বন্ধ করে দেন। এর পর থেকে শ্রমিকেরা কারখানার ভেতর টানা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে থাকেন।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায় গিয়ে দেখা যায়, টঙ্গীর হকের মোড়ের পাশেই কারখানাটির অবস্থান। মূল ফটক বন্ধ। সেখানে অবস্থান করছেন ৫০ থেকে ৬০ জন শ্রমিক। আর ভেতরে অবস্থান করছেন আরও কয়েক শ শ্রমিক। তাঁদের কেউ দাঁড়িয়ে, কেউবা রয়েছেন বসে। ফটক বন্ধ থাকায় ভেতরে আসা–যাওয়ার সুযোগ নেই। জরুরি প্রয়োজনে শ্রমিকেরা বাইরে বের হচ্ছেন ফটক টপকে।
কথা হয় কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে। এর মধ্যে মো. সোহেল বলেন, ‘আমাদের মূল দাবি ছিল কারখানার ভেতরে শ্রমিক ইউনিয়ন গঠনের সুযোগ দেওয়া। কিন্তু সেটা বাদ রেখে অন্য ১১ দাবি পূরণ করেছিল কারখানা কর্তৃপক্ষ। বলা হয়েছিল আমাদের এ দাবিও মেনে নেওয়া হবে। কিন্তু ১৭ দিন পরেও তা মানা হয়নি। তাই আমরা আবারও বাধ্য হয়ে বিক্ষোভে নেমেছি।’
ফটকের পাশেই অবস্থান করছিলেন কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী। কথা হলে মো. হুমায়ন বলেন, ‘রাত থেকেই শ্রমিকেরা ফটক বন্ধ করে রেখেছেন। কাউকে ঢুকতে বা বের হতে দিচ্ছেন না। ভেতরে আমাদের কয়েকজন স্যারও রয়েছেন। তবে সবাই শান্তিপূর্ণভাবেই অবস্থান করছেন।’
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে গাজীপুর শিল্প পুলিশের টঙ্গী জোনের সহকারী পুলিশ সুপার মো. মোশারফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকেরা গতকাল রাত থেকেই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন। আমরা গতকাল রাত থেকেই তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু তাঁরা দাবি আদায় না হওয়ায় বিক্ষোভ থেকে সরছেন না। আমরা মালিকপক্ষের সঙ্গে বসে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি।’