পঞ্চাশোর্ধ্ব ইয়াসমিন বেগম প্রথমবারের মতো ছেলের বিশ্ববিদ্যালয়ে এলেন। হলের যে কক্ষটিতে ছেলে থাকতেন, সেই কক্ষের শূন্য বিছানার সামনে দাঁড়িয়ে উদাসীন হয়ে চারপাশে তাকান। একপর্যায়ে ছেলের ব্যবহৃত তোশক, বইপত্রসহ যাবতীয় জিনিসে হাত বুলাতে থাকেন। তাঁর চোখ দিয়ে তখন অঝরে ঝরছিল পানি।
আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) শাহপরান হলের ২১৮ নম্বর কক্ষে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়।
কক্ষটিতে থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাশে গাজী-কালু টিলা লাগোয়া ‘নিউজিল্যান্ড’ এলাকায় ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারানো লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. বুলবুল আহমেদ (২২)। গত সোমবার সন্ধ্যায় বুলবুল নিহত হন।
ইয়াসমিন বেগমের সঙ্গে তাঁর দুই মেয়েও উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা সবাই বুলবুলের বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ কাঁদলেন। পরে তাঁরা শাহপরান হলের প্রাধ্যক্ষের কক্ষে এসে বসেন। এখানে বুলবুলের ব্যবহৃত ল্যাপটপ ও অন্য জিনিসপত্র তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক আমিনা পারভীন, প্রক্টর ইশরাত ইবনে ইসমাইল, শাহপরান হলের প্রাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রাধ্যক্ষের কক্ষে বসে নিহত বুলবুলের বড় বোন সোহাগী আক্তার (২৮) অভিযোগ করেন, তাঁদের ধারণা, বুলবুলের ওপর আগে থেকেই কারও ক্ষোভ ছিল। তাই তাঁকে পরিকল্পিতভাবে কেউ হত্যা করিয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনকে রিমান্ডে নিলেই প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।
বুলবুলের মা ইয়াসমিন বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘সাফল্যই আমার ছেলেকে মাটির তলে নিছে। আজকে যদি বুলবুল ঝালমুড়ি বেচত, তাইলে তারে কেউ খুন করতে পারত? তারে কেউ মারাইছে। আরও ভালো করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা হোক। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।’
এর আগে বুলবুল হত্যাকাণ্ডের পর রাতেই সিলেট মহানগরের জালালাবাদ থানায় হত্যা মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন। পরে পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার হওয়া তিনজন ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বুলবুলের বাড়ি নরসিংদী সদর উপজেলার নন্দীপাড়া গ্রামে।