পাবনার সুজানগরে নির্বাচনী বিরোধের জেরে হামলায় আহত আরও এক ব্যক্তির মৃত্যু
পাবনার সুজানগরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের বিরোধের জেরে সংঘর্ষে আহত এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার রানীনগর ইউনিয়নের রানীনগর গ্রামে গত শনিবার হামলায় গুরুতর আহত হন তিনি। এরপর ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি করা হলে আজ বৃহস্পতিবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
নিহত ওই ব্যক্তির নাম মোজাহার বিশ্বাস (৫০)। তিনি গত ৮ মে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওহাবের সমর্থক ছিলেন।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রানীনগর গ্রামে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এর জের ধরেই ২২ জুন উপজেলার আল-আমিন মিয়া (৩৫) নামের এক যুবককে কুপিয়ে আহত করা হয়। তাঁকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে বিকেলে তিনি মারা যান। নিহত আল-আমিন ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য ছিলেন। তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী শাহিনুজ্জামানের সমর্থক ছিলেন। শাহিনুজ্জামান সদ্য বিদায়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
এ ঘটনায় শাহিনুজ্জামানের সমর্থকেরা ক্ষিপ্ত হন। পরদিন ২৩ জুন সকালে তাঁরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী আবদুল ওহাবের সমর্থকদের ওপর হামলা শুরু করেন। অন্তত ১৫টি বাড়ি ভাঙচুর, লুটতরাজ ও কয়েকজনকে মারধর করেন। এদিন মোজাহার বিশ্বাসকে হাতুড়িপেটা করা হয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকায় নেওয়া হয়। জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ তিনি মারা যান।
পাবনার সহকারী পুলিশ সুপার (সুজানগর সার্কেল) রবিউল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, মোজাহার বিশ্বাস চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকাতে মারা গেছেন। সেখানেই তাঁর ময়নাতদন্ত হবে। মরদেহ এলাকায় ফেরার পর পরিবার মামলা দিলে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে পূর্বের হত্যা ও মারধরের ঘটনার পর থেকেই ওই এলাকায় পুলিশি তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। এখন এলাকার পরিস্থিতি শান্ত আছে।
জানতে চাইলে সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল ওহাব বলেন, ‘রানীনগরে নিহত দুজনই আমার কর্মী, আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলেন। আমি দুটি হত্যারই বিচার চাই। সেই সঙ্গে যারা মানুষের বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট করেছে, তাদের শাস্তি চাই।’
সদ্য বিদায়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিনুজ্জামান শাহিন বলেন, ‘যেদিন যুবলীগ নেতা আল–আমিনকে হত্যা করা হয়, পরদিনই নিহতের লোকজন মোজাহার বিশ্বাসকে মারধর করে। কে কার লোক, এসব বিষয় নয়, হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত, তাদের বিচার হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে গত ৮ মে সুজানগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওহাব এবং সাধারণ সম্পাদক মো. শাহিনুজ্জামান চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। শাহীনুজ্জামান সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, পদ্মার বালুমহাল দখলসহ নানা বিষয় নিয়ে দুজনের দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে। যার ফলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দুই পক্ষের উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। শুরু থেকেই একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি হুমকির অভিযোগ দিচ্ছিলেন। নির্বাচনের আগে গত ২৩ এপ্রিল ও ২ মে সন্ধ্যায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে কয়েকজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত সাতজন আহত হন। এরপর ৬ মে রাত সাড়ে ১২টার দিকে ২২ লাখ ৮২ হাজার ৭০০ টাকাসহ শাহিনুজ্জামান র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন। পরে মুচলেকা নিয়ে তাঁকে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়। নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক শাহিনুজ্জামানকে হারিয়ে সভাপতি আবদুল ওহাব বিজয়ী হন। এর পর থেকে দুই পক্ষের বিরোধ আরও প্রকট আকার ধারণ করে।