বর্ষা এলেই সড়ক ভাঙে পাঁচ থেকে সাতবার, সংস্কারের দায় এলাকাবাসীর
প্রতি বছর বর্ষা এলেই পাঁচ থেকে সাতবার ভাঙে সড়কটি। যাতায়াতের সুবিধার্থে প্রতি বছরই এলাকার কিছু তরুণ স্বেচ্ছাশ্রমে সড়কটি সংস্কার করেন। গত ছয় বছর ধরে এভাবে চলে আসছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কটি নিয়ে বর্ষা মৌসুমে যেন দুর্ভোগের শেষ নেই অন্তত চারটি গ্রামের ১০ হাজার মানুষের।
সড়কটি অবস্থিত চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে। এর নাম সামমাহালদার পাড়া, মোকামী পাড়া, ছামিদর কোয়াং সংযোগ সড়ক। সর্বশেষ গত সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে হালদা নদীর পানির তোড়ে সড়কটির অন্তত ২০০ মিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ ছাড়াও ইট বিছানো সড়কটির অন্তত ১৫-২০টি তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। এতে গত এক সপ্তাহ ধরে সড়কটিতে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সড়কটির কিছু অংশ পাশের জমির সঙ্গে মিশে গেছে, যেখান দিয়ে হেঁটে চলাচলও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
গত শনিবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সড়কটির যে ২০০ মিটারে ভাঙন দেখা দিয়েছে তা মোকামী পাড়া অংশে। এর মধ্যে চারটি স্থানে সড়ক ভেঙে একেবারে পাশের জমির সঙ্গে মিশে গেছে, সড়কের কোনো অস্তিত্বই নেই। এলাকার মানুষ হেঁটে সড়কটি দিয়ে চলাচল করছেন, যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত রোববার ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া হালদা নদীর পানি ৫ থেকে ৬ ফুট বেড়ে যায়। এ সময় স্রোতের তোড়ে সড়কটির এই বেহাল দশা হয়েছে। এক কিলোমিটার অংশে পায়ে হেঁটে চলাচল ছাড়া উপায় নেই। তাও ভাঙা গর্ত আর জমির আল দিয়ে হাঁটতে হচ্ছে। সড়কটি আরও ৩ থেকে ৪ ফুট উঁচু করে দুপাশে প্রতিরক্ষা দেয়াল দিলে সড়কটি রক্ষা করা যাবে বলে অভিমত তাঁদের।
মোকামীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি এস এম হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের এই সড়ক দিয়ে চার গ্রামের ১০ হাজার মানুষের চলাচল রয়েছে। এলাকাবাসী সড়কটি টেকসই করে নির্মাণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ভাঙা সড়কের কারণে গ্রামবাসীকে বছরের প্রায় ছয় মাস অনেকটা অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকতে হয়।
এলাকাবাসী জানায়, গত ছয় বছরে স্থানীয় তরুণেরা স্বেচ্ছাশ্রমে অন্তত ১৬ বার সংস্কার করেছেন। বালু আর ইট বসিয়ে সড়কটি চলাচলের উপযোগী করা হয়। কিন্তু বর্ষায় নদীর পানির তোড়ে সড়কটি মেরামতের পরও বারবারও ভাঙনের মুখে পড়ছে।
গত ছয় বছর ধরে সড়কটি সংস্কারের সঙ্গে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবীদের একজন স্থানীয় তরুণ এস এম কায়সার হামিদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ১৫ থেকে ২০ জন তরুণ চাঁদা তুলে সড়কটি বারবার মেরামত করে আসছেন। তবে গ্রামটি নদী তীরবর্তী হওয়ায় বর্ষায় প্রায়ই নদীর পানি ঢুকে পড়ে সড়কটি ভেঙে যায়। নদীর তীরে বেড়িবাঁধ থাকলে এই সমস্যা থাকত না।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, সড়কটিতে আরসিসি ঢালাই এবং প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণের জন্য একাধিকবার বরাদ্দ চেয়েও পাওয়া যায়নি। আগামী অর্থবছরে আবারও বরাদ্দ চাওয়া হবে।