‘তারা ছিল মানিকজোড়, একসঙ্গেই মারা গেল’

নিহত মোহাম্মদ তারেক ও মোহাম্মদ মহিউদ্দিনছবি: সংগৃহীত

‘তারা ছিল মানিকজোড়ের মতো। একসঙ্গে দুজনের বেড়ে ওঠা। আল্লাহ নিয়েও গেল একসঙ্গে।’ বসতঘরের সামনে বিলাপ করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন সৌদি আরবের মদিনায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের বাবা নুর আহমদ।

গত শনিবার সংঘটিত ওই সড়ক দুর্ঘটনায় মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও তাঁর চাচাতো ভাই মোহাম্মদ তারেকের মৃত্যু হয়। এই দুই যুবকের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার মাদার্শা ইউনিয়নে। গতকাল রোববার বিকেলে দুজনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শোকাবহ পরিবেশ। পরিবারের সদস্যরা নিহত দুজনের কথা স্মরণ করে আহাজারি করছেন।

নুর আহমদের সঙ্গে যখন কথা হয়, তখন তিনি তাঁর ছোট ভাই আবদুল করিমের ঘরে। নিহত মোহাম্মদ তারেক আবদুল করিমের ছেলে। নুর আহমদ বলেন, ‘গ্রামের আশপাশে প্রায় সবারই পাকা ঘর। আমার ছেলে মহিউদ্দিনও একটি পাকা ঘর তৈরির স্বপ্ন দেখত। সেই স্বপ্নপূরণেই সৌদি আরব গিয়েছিল। স্বপ্ন পূরণ না হতেই আমার ছেলেটা না ফেরার দেশে চলে গেল।’

সাত বছর আগে মহিউদ্দিন সৌদি আরবে গেছেন জানিয়ে তাঁর বাবা নুর আহমদ বলেন, ‘আমাদের অভাবের সংসার ছিল। ছেলেটা যাওয়ার সময় বলেছিল, আব্বা আর দুই থেকে তিন কেজি করে চাল কিনতে হবে না। সৌদি আরবে গিয়ে একটু স্বাবলম্বী হই, তারপর বস্তায় চাল কিনব।’ তিনি আরও বলেন, ‘ছেলেটা শুরুতে সুবিধা করতে পারেনি। এ বছর আর্থিক অবস্থা কিছুটা ভালো হওয়ায় জানিয়েছিল কিছুদিনের মধ্যেই বাড়ি এসে পাকা ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করবে। এরপর বিয়ে করবে।’

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছেলে ও ভাতিজার কথা বলতে বলতে আহাজারি করছেন নুর আহমদ
ছবি: প্রথম আলো

নিহত তারেকের বাবা আবদুল করিম বলেন, তাঁর ছেলেরও ইচ্ছা ছিল আলাদা করে একটি পাকা ঘর নির্মাণের। এরই মধ্যে প্রস্তুতিও শুরু করেন। সড়ক দুর্ঘটনায় ছেলের সব স্বপ্ন চুরমার করে দিয়েছে।

পরিবারের সদস্যরা জানান, শনিবার সৌদি আরবের স্থানীয় সময় রাত ১১টার দিকে সড়ক দুর্ঘটনাটি ঘটে। মদিনার দূরবর্তী আলীমাসি নামক এলাকা থেকে নিজেদের উৎপাদিত শাকসবজি পিকআপ ভ্যানে করে মদিনা নগরে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন দুই চাচাতো ভাই মহিউদ্দিন ও তারেক। পিকআপ ভ্যানটি চালাচ্ছিলেন তাঁদের আরেক বন্ধু মনছুর আলী। মনছুরের বাড়িও সাতকানিয়ার মাদার্শায়।

পিকআপ ভ্যানটি জেদ্দা-মদিনা সড়কের আলীতমা নামক স্থানে পৌঁছালে যাত্রীবাহী একটি বাসের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে পিকআপ ভ্যানটি দুমড়েমুচড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই মহিউদ্দিন ও তারেক মারা যান। গুরুতর আহত হয়েছেন পিকআপ ভ্যানের চালক মনছুর আলী। মনছুর বর্তমানে মদিনার একটি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

নিহত দুজনের প্রতিবেশী ও মাদার্শা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইব্রাহিম প্রথম আলোকে বলেন, সৌদি আরবে থাকা স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মদিনার একটি সরকারি হাসপাতালের হিমঘরে দুজনের লাশ রাখা হয়েছে। সেখানেই তাঁদের দাফনের জন্য প্রস্তুতি চলছে।