উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় এক কর্মীকে ‘মারধর’ করল ছাত্রলীগ

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় ফারদিন কবির নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের এক কর্মীকে নিজ সংগঠনের নেতা-কর্মীরাই মারধর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরাণ হলে এ ঘটনা ঘটেছে।

ফারদিন কবির বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ও রসায়ন বিভাগ ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসানের সমর্থক। আহত ফারদিন কবিরকে গতকাল রাতেই সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর আগে গত রোববার রাতে শাহপরাণ হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সানজিদ চৌধুরীকে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা মারধর করেন।

ফারদিন ও তাঁর সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খালের মাঠে ফারদিনের এক বন্ধু ও তাঁর বান্ধবী আড্ডা দিচ্ছিলেন। তাঁরা দুজনই ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এ সময় ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী খালের মাঠে এসে ওই দুজনের নাম–ঠিকানা জানতে চেয়ে জেরা শুরু করেন। একপর্যায়ে ওই ছাত্র ও ছাত্রীর সঙ্গে ছাত্রলীগের কর্মীরা বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান। পরে ওই ছাত্র ফারদিনকে বিষয়টি মুঠোফোনে জানালে ফারদিন ঘটনাস্থলে আসেন। এর পর ফারদিনের সঙ্গেও ছাত্রলীগের কর্মীদের কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ফারদিনের সঙ্গে ছাত্রলীগের কর্মীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার জেরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে শাহপরাণ হলে ফারদিনকে একা পেয়ে আবার মারধর করা হয় বলে দাবি করছেন ফারদিন।

ফারদিন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বন্ধু এবং তাঁর বান্ধবীকে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী উত্ত্যক্ত করছিলেন। বিষয়টি জানার পর তিনি ঘটনাস্থলে গেলে তাঁর সঙ্গেও কথা–কাটাকাটি ও একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এরপর উত্ত্যক্তকারীরা পালিয়ে যান। প্রথমে তিনি উত্ত্যক্তকারীদের চিনতে পারেননি। তবে পরে জানতে পেরেছেন, হামলাকারীরা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক উপদপ্তর সম্পাদক সজীবুর রহমানের সঙ্গে রাজনীতি করেন।

এ ঘটনার পর রাতে ফারদিন হলে ফিরলে সজীবুর রহমানের সমর্থক সাজ্জাদ হোসেন তাঁকে কল দেন। ফারদিন বলেন, সাজ্জাদ তাঁকে মুঠোফোনে আশ্বস্ত করেন, বিষয়টি মীমাংসা হয়ে যাবে। কথা বলার পর প্রায় ১০ মিনিটের মধ্যেই সাজ্জাদের নেতৃত্বে ৬০ থেকে ৭০ জন ছাত্রলীগের কর্মী নিয়ে হলে এসে তাঁকে মারধর করেন। হামলার সময় লোহার পাইপ দিয়ে পেটানোয় তিনি শরীরে বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। এ সময় ফারদিকে উদ্ধার করতে এলে তাঁর বন্ধুরাও আহত হন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে সাজ্জাদ হোসেনের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাজ্জাদ বর্তমানে কোনো পদে না থাকলেও তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা সজীবুরের ঘনিষ্ট। সজীবুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল রাতে জুনিয়রদের মধ্যে ছোট বিষয় নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল। পরে রাতেই আমরা সিনিয়রেরা বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরাণ হলের প্রাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান খান বলেন, হলের বাইরের ঘটনার জেরে হলের ভেতরে গোলমাল হয়েছে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।