বাউফলে পরিত্যক্ত ঘরে চাপা পড়ে পথচারীর মৃত্যু, বাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত

পটুয়াখালীর বাউফল উপেজলার কালাইয়া-ভরিপাশা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কাম সড়কের ছয়টি স্থান ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। সেই সঙ্গে যানবাহন চলাচলও বন্ধ রয়েছে। আজ দুপুরে ধানদী গ্রামে।ছবি: প্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে পটুয়াখালীর বাউফলে ঝোড়ো বাতাসে ঘরের নিচে চাপা পড়ে আবদুল করিম খান (৬৫) নামের এক পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলা পরিষদসংলগ্ন একটি পরিত্যক্ত টিনশেড ঘরে চাপা পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল দুপুরে ঝড়ের কবল থেকে বাঁচতে ওই পরিত্যক্ত ঘরটির ভেতর ঢোকেন করিম। মুহূর্তের মধ্যে ঘরটি বিধ্বস্ত হয়ে যায়। এতে ওই ঘরের নিচে চাপা পড়েন করিম। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। করিমের বাড়ি উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের নিমদী গ্রামে।

সাত থেকে আট ফুট উচ্চতার জোয়ারের তোড়ে উপজেলার কালাইয়া-ভরিপাশা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও সড়কের ছয়টি স্থান ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। এতে চন্দ্রদ্বীপ নাজিরপুর, ধূলিয়া, কাছিপাড়া, কালাইয়া, কেশবপুর এলাকার বাসিন্দারা পানিবন্দী হয়েছেন।

এদিকে সাত থেকে আট ফুট উচ্চতার জোয়ারের তোড়ে উপজেলার কালাইয়া-ভরিপাশা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও সড়কের ছয়টি স্থান ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। এতে চন্দ্রদ্বীপ নাজিরপুর, ধূলিয়া, কাছিপাড়া, কালাইয়া, কেশবপুর এলাকার বাসিন্দারা পানিবন্দী হয়েছেন। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে, এসব এলাকার অন্তত পাঁচ সহাস্রাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।

কালাইয়া-ভরিপাশা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় এর ওপর স্থাপিত গুরুত্বপূর্ণ সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারেরও বেশি মানুষ যাতায়াত করে। এ ছাড়া জোয়ারের তোড়ে নদীবেষ্টিত চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চরকচুয়া এলাকার আধা কিলোমিটারেরও বেশি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ওই ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক পরিবার।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপজেলাটিতে দেড় সহাস্রাধিক ঘর ভেঙে গেছে বলে জানিয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়।

বাউফলে চারদিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন প্রায় এক লাখ পাঁচ হাজার গ্রাহক। বিশেষ করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা আছেন চরম ভোগান্তিতে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আবদুর রউফ বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় হাসপাতালটিতে সব ধরনের পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া বন্ধ রয়েছে পানির সরবরাহও।

মাহাবুব আলম নামের এক রোগীর অভিভাবক বলেন, তাঁর মেয়েকে নিয়ে সোমবার রাতে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। বিদ্যুৎ ও পানি না থাকায় কি যে ভোগান্তি পড়েছেন, তা বলে বোঝানো যাবে না। গরম তো আছেই, পানির অভাবে শৌচাগারেও যাওয়া যায় না। কষ্ট সহ্য করতে না পেরে মেয়েকে বাসায় নিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন।

বিদ্যুৎ ও পানি না থাকায় কি যে ভোগান্তি, তা বলে বোঝানো যাবে না। গরম তো আছেই, পানির অভাবে শৌচাগারেও যাওয়া যায় না। কষ্ট সহ্য করতে না পেরে মেয়েকে বাসায় নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
মাহাবুব আলম নামের এক রোগীর অভিভাবক

পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বাউফল জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. মুজিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, শনিবার বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের কাজ করার কারণে বন্ধ ছিল। পরের দিন ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের ওপর গাছ পড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অন্তত ২৫টি খুঁটি ভেঙে গেছে। দুই শ জায়গায় তার ছিড়ে গেছে। এ কারণে চারদিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করতে নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছে মাঠকর্মীরা।

বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় মানুষের ভোগান্তির কথা স্বীকার করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বশির গাজী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দেড় সহাস্রাধিক ঘর ভেঙে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ দুই শ কিলোমিটারের বেশি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য সব দপ্তরের লোকজন নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

আরও পড়ুন