খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার বাসায় পাওয়া গেল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার বাসভবন থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১৩ বস্তা চাল জব্দ করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ওই বস্তাগুলোতে ৫৯০ কেজি চাল ছিল। এ ছাড়া চাল বিক্রির পর ওই কর্মকর্তার বাসভবনে রাখা ১ হাজার ১০০টি খালি বস্তাও জব্দ করা হয়েছে।
আজ শনিবার সকালে উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকবাল মাহমুদের বাসভবন থেকে এসব চাল ও খালি বস্তা জব্দ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল মামুন। পরে খাদ্য বিভাগের ওই কর্মকর্তার বাসভবনের যে কক্ষে এসব চাল ও বস্তা পাওয়া যায়, তা তালাবদ্ধ করে সিলগালা করে রাখা হয়েছে।
ইউএনওর কার্যালয় ও খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, ভেদরগঞ্জ উপজেলায় ১৩টি ইউনিয়ন রয়েছে। এসব ইউনিয়নের ১৭ হাজার ২০০ পরিবারকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল দিচ্ছে সরকার। প্রতিটি পরিবারকে মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। ইউনিয়ন পর্যায়ে পরিবেশকের মাধ্যমে প্রতি কেজি চাল ১৫ টাকা দরে সরবরাহ করা হচ্ছে।
চালগুলো জব্দ করে বাসভবনের ওই কক্ষে সিলগালা করে নোটিশ টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আজ সকালে ভেদরগঞ্জের ইউএনও আবদুল্লাহ আল মামুন উপজেলা খাদ্যগুদাম পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়ে গুদামে মজুত করা কিছু চালের বস্তা কম দেখতে পান। তখন তিনি পুলিশ নিয়ে খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকবাল মাহমুদের বাসভবনে যান। সেখানে একটি কক্ষে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চালের ১৩টি বস্তা দেখতে পান। এসব বস্তায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সিল লাগানো ছিল। ওই বস্তাগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকবাল মাহমুদ কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তখন সেখানে ১ হাজার ১০০টি খালি বস্তা পাওয়া যায়। ওই বস্তাগুলো এই বাসভবনে কীভাবে এল, তারও কোনো জবাব দিতে পারেননি ইকবাল মাহমুদ। তখন ওই ১৩ বস্তা চাল ও ১ হাজার ১০০টি খালি বস্তা জব্দ করা হয়।
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সিল লাগানো ৩০ কেজির ৩ বস্তা ও ৫০ কেজির ১০ বস্তায় মোট ৫৯০ কেজি চাল জব্দ করা হয়। এ সময় সেখান থেকে প্লাস্টিকের ৫০ কেজির ৩০০টি, পাটের ৫০ কেজির ৫০টি ও পাটের ৩০ কেজির ৭৫০টি খালি বস্তা জব্দ করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকবাল মাহমুদের উপস্থিতিতে ওই কক্ষে তালা লাগিয়ে সিলগালা করে দেন।
ইউএনও আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘খাদ্যগুদাম একটি স্পর্শকাতর জায়গা। এখানে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের চাল ও গম মজুত রাখা হয়। সরকারি নির্দেশনা ছাড়া এখান থেকে একটি বস্তা চালও বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু খাদ্যগুদামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিজ বাসভবনে নিয়ে চালগুলো রেখেছেন। আমরা বিষয়টি জানতে চাইলে এর কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। এ কারণেই চালগুলো জব্দ করে বাসভবনের ওই কক্ষে সিলগালা করে নোটিশ টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানার জন্য ভেদরগঞ্জ উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকবাল মাহমুদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা দিয়েও তাঁর কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে শরীয়তপুর জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক মো. মোশারফ হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘খাদ্যগুদামের কিছু চাল এক কর্মকর্তার বাসভবনে জব্দ করার বিষয়টি কেউ আমাকে জানাননি। বিধান অনুযায়ী গুদামের মালামাল কর্মকর্তার বাসভবনে থাকার সুযোগ নেই। ঘটনা যদি এমন হয়, তাহলে তদন্ত করা হবে। তদন্তে জড়িত থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’