গৃহবধূকে কুপিয়ে হত্যা, রেললাইনের ওপর থেকে লাশ উদ্ধার, স্বামী পলাতক
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় শিলা খাতুন (২৩) নামের এক গৃহবধূকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার মুন্সীগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন এলাকার রেললাইনের ওপর থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত শিলা খাতুন আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহ ইউনিয়নের বলিয়ারপুর গ্রামের হামিদুল ইসলামের মেয়ে। একই উপজেলার জেহালা ইউনিয়নের রোয়াকুলি গ্রামের রাসেল মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তাঁর। খুনের ঘটনা জানাজানির পর নিহতের স্বামী রাসেল মিয়া একমাত্র শিশুসন্তানকে নিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন।
রেলওয়ে পুলিশের চুয়াডাঙ্গা ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদ রানা বলেন, আজ সকাল সাড়ে সাতটার দিকে চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে খবর দেওয়া হয়, মুন্সীগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের ২০০ মিটার উত্তরে অজ্ঞাতনামা এক নারীর লাশ পড়ে আছে। দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে নিহত নারীর ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত নারীর ভাই সাবের আলী লাশটি শনাক্ত করেন।
এসআই মাসুদ রানা বলেন, ‘নিহত শিলা খাতুনের মাথা, কপাল, ঘাড় ও পায়ে ধারালো অস্ত্রের একাধিক আঘাত আছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য এখানে এসেছি। লাশের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠানো হবে। এ ঘটনায় পোড়াদহ রেলওয়ে থানায় মামলাসহ আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রেললাইনের পাশে নিহত শিলা খাতুনের মরদেহ পড়ে আছে। সেখানে পুলিশ সদস্যরা ছিলেন। শিলার শরীরের ক্ষতস্থানগুলোতে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। কিছুক্ষণ পর নিহতের বাবা হামিদুল ইসলাম, মা আফিরন বেগম এবং দুই ভাই সাবের আলী, জুয়েল রানাসহ স্বজনেরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। স্বজনদের আহাজারিতে ঘটনাস্থলে শোকাবহ পরিবেশ তৈরি হয়। চুয়াডাঙ্গা থেকে যাওয়া রেলওয়ে পুলিশের এসআই মাসুদ রানাসহ পুলিশ সদস্যরা তথ্য সংগ্রহ করছিলেন। সকাল নয়টার পর পোড়াদহ রেলওয়ে থানার এসআই নার্গিস লাশের সুরতহাল তৈরি করেন।
নিহত শিলার বড় ভাই জুয়েল রানা বলেন, গত শনিবার রাতে রাসেলের পকেট থেকে কিছু টাকা খোয়া যায়। টাকার জন্য তিনি শিলাকে দায়ী করলেও পরে প্রমাণিত হয়, রাসেলের মা টাকা সরিয়েছেন। এ নিয়ে শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার সকালে স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া হয়। রাসেল গতকাল সকালে ফোন করে জানান, শিলাকে নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। শিলাকে তালাক দিয়ে দেবেন। ভাইয়েরা যেন গিয়ে তাঁকে নিয়ে আসেন। একই বিষয়ে দুপুর ও রাতে রাসেল ফোন দিলে রাসেলকে জানানো হয়, আজ সকালে বসে সমাধান করা হবে।
জুয়েল বলেন, ‘গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে শিলা ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে জানায়, সোমবার সকালে যেন অবশ্যই দেখা করি। রাত চারটার দিকে রাসেল ফোন দিয়ে জানায়, “দুধের শিশু ফেলে রেখে তোমাদের বোন পালিয়ে চলে গেছে। আমরা খুঁজে খুঁজে পাচ্ছি না।” এরপরও কয়েক দফা ফোন দেয় রাসেল। সকালে বোনের বাড়িতে আসার পথে শুনতে পাই, মুন্সীগঞ্জ রেললাইনের ওপর এক মহিলার লাশ পড়ে আছে। কাছে এসে দেখি, বোনের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে আলমডাঙ্গা উপজেলার রোয়াকুলি গ্রামের বাড়িতে গিয়ে রাসেল বা তাঁদের পরিবারের সদস্যদের কাউকেই পাওয়া যায়নি। প্রতিবেশীরা জানান, সকাল থেকেই সবাই ঘরে তালা মেরে আত্মগোপনে চলে গেছেন।