রাসেলস ভাইপারের বিষ ফুসফুস, কিডনি নষ্ট করে দিতে পারে
খুলনায় সাপের কামড়ের প্রতিকার ও চিকিৎসা নিয়ে আয়োজিত এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বক্তারা বলেছেন, বাংলাদেশে সাধারণত গোখরা, কেউটে, রাসেল ভাইপার (চন্দ্রবোড়া) ও সবুজবোড়া এই চার বিষধর সাপের কামড়ে মানুষ বেশি মারা যায়। রাসেলস ভাইপারের বিষ ফুসফুস, কিডনি নষ্ট করে দেওয়ার মতো বিভিন্ন জটিলতা তৈরি করে। গোখরা ও রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ে পাঁচ মিনিটের মধ্যে ক্ষতস্থান ফুলে যায়, অন্য দুটি সাপের ক্ষেত্রে তা হয় না।
মঙ্গলবার খুলনা নগরে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ এ প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে। কর্মশালায় এসব কথা বলেন বন্য প্রাণী ও পরিবেশবিশেষজ্ঞ মো. আবু সাইদ। বনকর্মীদের নিয়ে সাপে কাটার প্রতিকার ও চিকিৎসাবিষয়ক এ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়।
আবু সাইদ বলেন, গোখরা সাধারণত সকালে ও বিকেলে, কেউটে রাতে, রাসেলস ভাইপার দিনে ও রাতে এবং সবুজ বোড়া দিনে কামড়ায়। সাপে কামড়ালে আতঙ্কিত না হয়ে শান্ত থাকতে হবে। যে জায়গা কামড়েছে, সেই জায়গা খুব বেশি নড়াচড়া করানো যাবে না। সাপে কামড়ানোর পর প্রথম ১০০ মিনিট খুব গুরুত্বপূর্ণ। ওই সময়ের মধ্যে সঠিক চিকিৎসা দেওয়া গেলে রোগী সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় গত জুন মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রকাশিত তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, প্রতিবছর দেশে গড়ে চার লাখ মানুষকে সাপে কামড়ায়। এর মধ্যে মারা যান গড়ে ৭ হাজার ৫০০ জন। খুলনা বিভাগের মানুষ সবচেয়ে বেশি সাপের কামড়ের শিকার হন। খুলনার প্রতি ১ লাখে ৬১৬ জনকে সাপে কামড়ায়। এ ছাড়া দেশে প্রতিবছর আড়াই হাজার গরু ও ৫৫ হাজারের মতো হাঁস-মুরগি সাপের কামড়ে মারা যায়।
আবু সাইদ আরও বলেন, সাপে কামড়ানোর পর ৬১ শতাংশ মানুষ যান ওঝার কাছে। আর ৩৫ শতাংশ মানুষ যান হাসপাতালে। যাঁরা আগে ওঝার কাছে যান, তাঁদের মধ্যে মারা যাওয়ার হার বেশি।
কোনো মানুষকে সাপে কামড়ালে কী করা উচিত, এ বিষয়ে আবু সাইদ বলেন, কাউকে সাপে কামড়ালে সবার আগে তাঁকে শান্ত থাকতে হবে। দৌড়াদৌড়ি করা যাবে না। এতে বিষ দ্রুত ফুসফুসে চলে যেতে পারে। বিষধর সাপে কামড়ানো রোগীর শরীর ধীরে ধীরে নিস্তেজ হতে থাকে। এ কারণে তাঁকে ঘুমাতে দেওয়া যাবে না। ক্ষতস্থানের ওপর দড়ি দিয়ে বাঁধলেও কোনো কাজে আসে না; বরং তা সেখানকার রক্তসঞ্চালন বন্ধ করে দিয়ে ওই অঙ্গ অকেজো হয়ে যেতে দিতে পারে। এরপর যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে।
প্রশিক্ষণে সভাপতিত্ব করেন সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহসিন হোসেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে খুলনা বিভাগে সবচেয়ে বেশি মানুষকে সাপে কামড়ায় ও মারা যান। সুন্দরবন ও সুন্দরবন-সংলগ্ন এলাকায় সাপের উপদ্রব বেশি, এ কারণে সাপ নিয়ে এ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে।
প্রশিক্ষণে আরও উপস্থিত ছিলেন সহকারী বন সংরক্ষক (সদর) এম এ হাসান, এ জে এম হাসানুর রহমান (খুলনা রেঞ্জ) ও ইকবাল হোসেন (সাতক্ষীরা রেঞ্জ)।