নেত্রকোনায় ধর্ষণের অপমান সইতে না পেরে স্কুলছাত্রীর ‘আত্মহত্যা’
নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার বাউসী ইউনিয়নে ধর্ষণের অপমান সইতে না পেরে এক স্কুলছাত্রী (১৫) বিষপানে ‘আত্মহত্যা’ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত সোমবার দুপুরে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই ছাত্রীর মৃত্যু হয়।
উপজেলার বাউসী ইউনিয়নে ওই ছাত্রীর বাড়ি। সে নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে বারহাট্টা থানায় ধর্ষণ ও আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের হয়েছে।
এদিকে ওই ছাত্রীর মারা যাওয়ার ঘটনায় বখাটে আকাশ হোসেন ওরফে প্রান্তর (২২) বিচারের দাবিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেলা একটার দিকে বারহাট্টার বাউসী ইউনিয়ন পরিষদের সামনের সড়কে মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ সমাবেশ করা হবে। ওই ছাত্রীর সহপাঠীরা ছাড়াও এলাকার বাসিন্দারা তাতে অংশ নেবেন।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সুসং ডহরপাড়া গ্রামের লিটন মিয়ার ছেলে বখাটে আকাশ প্রায়ই ওই ছাত্রীকে স্কুলে আসা–যাওয়ার পথে উত্ত্যক্ত করত। গত শনিবার বেলা ১১টার দিকে ওই ছাত্রী প্রাইভেট পড়তে যাচ্ছিল। এ সময় রাস্তায় ওত পেতে থাকা আকাশ তাকে জোর করে ধরে একটি স্থানে নিয়ে যায় এবং ধর্ষণ করে। পরে ওই ছাত্রী বাড়িতে এসে ঘটনাটি তার পরিবারকে জানায়।
কিছুক্ষণ পর সে সবার অজান্তে ঘরে থাকা কৃষিকাজে ব্যবহৃত কীটনাশক খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে স্বজনেরা তাকে প্রথমে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ওই রাতেই তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হস্তান্তর করা হয়; কিন্তু সেখানেও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র না পাওয়ায় তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত সোমবার দুপুরে ওই ছাত্রী মারা যায়। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে ওই ছাত্রীর ভাই বাদী হয়ে আকাশের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে মামলা করেন। তবে আজ বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ আকাশকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
জানতে চাইলে বারহাট্টা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, ‘আমরা আসামি আকাশকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। আশা করছি, দ্রুত তাকে গ্রেপ্তার করতে পারব।’
বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের বারহাট্টা কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক সুরজিত ভৌমিক বলেন, ‘মেধাবী ওই মেয়ে আমাদের ইয়ুথ গ্রুপের সদস্য ছিল। বাল্যবিবাহ রোধসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ করত। ধর্ষণের অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে সে। আমরা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
সুরজিত ভৌমিক আরও বলেন, ‘বছরখানেক আগে একই ইউনিয়নের প্রেমনগর গ্রামেও কাউসার নামে আরেক বখাটে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করে।’