কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকের ঢল, হোটেল-মোটেল ফাঁকা নেই
আজ শনিবার বিকেল চারটার কথা। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারের সুগন্ধা পয়েন্টে তখন অন্তত এক লাখ মানুষের সমাগম। কেউ ঘোড়ার পিঠে চড়ে ছুটছেন এদিক-সেদিক, কেউ মুঠোফোনে ছবি তোলায় ব্যস্ত। কেউ আবার দ্রুতগতির নৌযান ‘জেডস্কি’ নিয়ে ঘুরে আসছেন সমুদ্রের বিশাল জলরাশি থেকে। অনেকে আবার বালুচরে সারিবদ্ধভাবে সাজানো কিটকটে (ছাতাযুক্ত চেয়ার) আয়েশি ঢংয়ে বসে এসব দৃশ্য উপভোগ করছেন।
সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের উত্তর দিকে সিগাল, লাবণী ও শৈবাল পয়েন্টের দুই কিলোমিটারে আরও ৮০ থেকে ৯০ হাজার মানুষের সমাগম দেখা গেছে। আবার সুগন্ধা থেকে দক্ষিণ দিকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত এক কিলোমিটারেও ৫০ হাজারের মতো পর্যটকের ভিড়। সব মিলিয়ে সৈকতের কলাতলী থেকে শৈবাল পয়েন্ট পর্যন্ত চার কিলোমিটার এলাকায় অন্তত সাড়ে তিন লাখ পর্যটক সমবেত হয়েছেন।
হোটেলমালিকেরা বলছেন, টানা তিন দিনের ছুটিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল নেমেছে। আজকে পর্যন্ত শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্টহাউসের কোনোটিতেই কক্ষ খালি নেই। যাঁরা অগ্রিম কক্ষ বুকড না করে আসছেন, তাঁরা বিপাকে পড়েছেন। হোটেল-মোটেল-গেস্টহাউসের দৈনিক ধারণক্ষমতা ২ লাখ ১২ হাজার।
সৈকত ভ্রমণে আসা বেশির ভাগ মানুষের প্রধান আকর্ষণ হলো সমুদ্রের নোনা জলে নেমে কিছুক্ষণ শরীর ভেজানো। শীতের ঠান্ডা হাওয়া উপেক্ষা করে সকাল থেকেই লাখো পর্যটক পানিতে নেমেছেন। সমুদ্রের নীল জলরাশি উপভোগ করে তাঁরা ছুটছেন কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের দিকে।
বিকেল পৌনে চারটার দিকে সুগন্ধা পয়েন্টে কথা হয় রাজশাহীর বাঘা থেকে আসা ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলামের সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে আছে মা, স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে। আমিনুল বলেন, জীবনের প্রথম তাঁরা কক্সবাজার সৈকত ভ্রমণে এসেছেন। কিন্তু সৈকতে মানুষের ঢল দেখে তাঁরা অবাক হন। তবে পর্যটকের অতিরিক্ত চাপের কারণে খাবারের দাম অনেক বেশি বলে দাবি করেন তিনি।
রাজধানীর শেওড়াপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী সাব্বির আহমদ বলেন, সকালে তিনি সাগরের পানিতে নেমেছিলেন। বিকেলে এসেছেন সূর্যাস্ত দেখতে। কাল সকালে মেরিন ড্রাইভ সড়ক, হিমছড়ি ঝরনা, পাথুরে সৈকত ইনানী, পাটুয়ারটেক ও টেকনাফ সীমান্ত ঘুরবেন।
এদিকে পর্যটকের অতিরিক্ত চাপ থাকায় কক্ষভাড়ার বিপরীতে এখন কোনো ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। জানতে চাইলে কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, পর্যটকের ভিড়ের সুযোগ নিয়ে কেউ যেন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করে, সে বিষয়ে হোটেলমালিকদের সতর্ক করা হয়েছে। এ ছাড়া খাবারের দামও যেন বাড়িয়ে আদায় না হয়, এ জন্য রেস্তোরাঁগুলোতে খাবারের তালিকা টাঙানো হয়েছে। তালিকা দেখেই পর্যটকেরা রেস্তোরাঁয় খাবার খাচ্ছেন। তবে সৈকত এলাকা ও সড়কের পাশে বিভিন্ন স্থানে কিছু ভ্রাম্যমাণ দোকানপাটে ইচ্ছামতো দামে খাবার বিক্রির অভিযোগ আছে।
সেলিম নেওয়াজ বলেন, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সৈকতে পর্যটকদের ভিড় থাকবে। ইতিমধ্যে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল-গেস্টহাউসে ৯৮ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকড হয়ে গেছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. জিললুর রহমান বলেন, কয়েক লাখ পর্যটকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ ব্যস্ততম সময় পার করছে। তবে আজ বিকেল পর্যন্ত কোনো পর্যটক হয়রানি কিংবা চুরি-ছিনতাইয়ের কবলে পড়ার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। যেকোনো ধরনের হয়রানি ও অপরাধ এড়াতে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে আছে।
এদিকে পর্যটক হয়রানি রোধ, হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোতে অতিরিক্ত টাকা আদায় বন্ধে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নেমেছেন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু সুফিয়ান বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁ ও হোটেলকে জরিমানা করেছেন। কয়েকটিকে সতর্ক করা হয়েছে।