‘বিগত সরকারের মতো হত্যা মামলাগুলো ডিপ ফ্রিজে ফেলে রাখবেন না’

তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার সাড়ে ১১ বছর উপলক্ষে মোমশিখা প্রজ্বালন। আজ রোববার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণেছবি: দিনার মাহমুদ

‘বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে ওসমান পরিবার দ্বারা মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীসহ নারায়ণগঞ্জে অসংখ্য হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার তো দূরের কথা, মামলা করতে পর্যন্ত সাহস করেননি স্বজনেরা। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি দাবি, ত্বকীসহ নারায়ণগঞ্জে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের বিচার করুন। বিগত সরকারের মতো এই হত্যা মামলাগুলো ডিপ ফ্রিজে ফেলে রাখবেন না। ঘাতকের বিচার করুন।’

আজ রোববার সন্ধ্যায় নগরের চাষাঢ়ায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১৩৮ মাস উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত মোমশিখা প্রজ্বালন কর্মসূচি অনুষ্ঠানে বক্তারা এই দাবি জানান। শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে নিহত ভুলু সাহা, শহীদুল ইসলাম, তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী, দিদারুল ইসলাম ও আশিক হোসেনের ফেস্টুন রাখা হয়।

সংগঠনের সভাপতি জিয়াউল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহার সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন নিহত ত্বকীর বাবা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক, খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি রথীন চক্রবর্তী, সিপিবি জেলার সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্যসচিব হালিম আজাদ, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হোসেন, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সম্পাদক হিমাংশু সাহা, সামাজিক সংগঠন সমমনার সাবেক সভাপতি দুলাল সাহা।

রফিউর রাব্বি বলেন, ‘স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের ফলে আমাদের আকাঙ্ক্ষার দেশ হবে। এটি জাতি–ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবার দেশ হবে। কিন্তু আমাদের ভেতরে সংশয়, ভয় দূরীভূত হচ্ছে না। যে সরকার ক্ষমতায় গিয়েছে, তারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে, জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তাই আমাদের আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্নের জন্য যে হাজারো ছাত্র-জনতা প্রাণ দিল, সেই স্বপ্নের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।’

শেখ হাসিনা সরকার পুলিশ বাহিনীকে কলুষিত করেছে উল্লেখ করে রফিউর রাব্বি বলেন, ‘পুলিশকে জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে নিকৃষ্ট বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছে। আমরা পুলিশ বাহিনীর পরিশুদ্ধ রূপ দেখতে চাই। আজকে বিভিন্ন জায়গায় স্কুল, মসজিদ দখল হচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে সরকার ও প্রশাসনকে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। আমরা ত্বকী হত্যার বিচার চাই। সাগর-রুনি, তনু, আশিক, চঞ্চল, ভুলুসহ নারায়ণগঞ্জে ওসমান দ্বারা সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। এসব হত্যাকাণ্ডের বিচারের মধ্য দিয়ে সরকার তার চরিত্রের প্রকাশ ঘটাবে; জনবান্ধব সরকার, মানুষের সরকার ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থাবান্ধব সরকারের মুখোশ উন্মোচন করবে।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরের শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দুই দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ৫ মার্চ ২০১৪ তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদেরই টর্চার সেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। অচিরেই তারা অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করবে। কিন্তু সে অভিযোগপত্র আজো আদালতে পেশ করা হয়নি। ত্বকী হত্যাকাণ্ডের পর থেকে প্রতি মাসের ৮ তারিখে ঘাতক ওসমান পরিবারের চেয়ে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট মোমশিখা প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে।