টাকা নিয়ে মাদক কারবারিকে ছেড়ে দেওয়া এসআইকে ডিবি থেকে প্রত্যাহার, তদন্ত শুরু
মাদক কারবারিকে আটকে ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত বগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপপরিদর্শক আমিরুল ইসলামকে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরে তাঁর প্রশিক্ষণ বাতিল করে বগুড়ায় ফেরত পাঠানোর পর গত শনিবার ডিবি থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।
অন্যদিকে অনুমতি ছাড়াই ডিবির টিম নিয়ে ঢাকায় গিয়ে মাদক কারবারিকে আটকের পর টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা তদন্তে নেমেছেন বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) স্নিগ্ধ আখতার। স্নিগ্ধ আখতার আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, এসআই আমিরুলের বিরুদ্ধে অনুমতি ছাড়া ডিবির একটি দল নিয়ে রাজধানীর মিরপুরের একটি আবাসিক হোটেলে মাদক কারবারিকে আটকের পর ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে পুলিশ সদর দপ্তরে তাঁর ডিটিএস (ডিটেকটিভ ট্রেনিং স্কুল) প্রশিক্ষণ বাতিল করে বগুড়ায় ফেরত পাঠানোর জন্য ৭ জুলাই জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পুলিশের সদর দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়। গত শনিবার বগুড়ায় ফেরার পর এসআই আমিরুল ইসলামকে ডিবি থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ডিবির যে দলটি ঢাকায় মাদক উদ্ধারের অভিযানে গিয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে, তাদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিললে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ১২ মে রাজধানীর মিরপুর-২ নম্বরের বড়বাগ এলাকার ‘গেস্ট হাউস’ নামের আবাসিক হোটেলে মাদক কারবারি রুবেল ওরফে পিচ্চি রুবেলকে আটক করে বগুড়া জেলা পুলিশের ডিবির একটি দল। ডিবির দলটির নেতৃত্বে ছিলেন এসআই আমিরুল ইসলাম। তাঁরা পাঁচজন ছিলেন। রুবেলের বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায়। তাঁর বিরুদ্ধে মুক্তাগাছা থানায় তিনটি মাদক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। বগুড়া ডিবি পুলিশের দল ঢাকার মিরপুরে অভিযানে যাওয়ার সিসিটিভির ফুটেজ ছড়িয়ে পড়লে ঘটনা জানাজানি হয়। এরপর ওই মাদক কারবারির কাছ থেকে আদায় করা টাকার পুরোটাই ফেরত দেন ডিবির সদস্যরা। তবে ঘটনার দেড় মাস পরও জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো ৩০ জুন থেকে এসআই আমিরুল ইসলামকে পুলিশ সদর দপ্তরে ৩৬ কার্যদিবসের ডিটিএস প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়।
এ নিয়ে ৬ জুলাই প্রথম আলো অনলাইনে ও ৭ জুলাই ছাপা পত্রিকায় ‘মাদক কারবারিকে টাকা নিয়ে ছেড়ে দিল ডিবি’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে নড়েচড়ে বসে জেলা পুলিশ। অভিযুক্ত ডিবির এসআইকে পুলিশ সদর দপ্তরের প্রশিক্ষণ বাতিল করে তলব করা হয় ডিবিতে।
বগুড়া জেলা ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুস্তাফিজ হাসান অভিযুক্ত আমিরুলের সাফাই গেয়ে প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছিলেন, এসআই আমিরুলের সোর্স (তথ্যদাতা) ছিলেন রুবেল। তথ্যপ্রাপ্তির জন্য আমিরুল তাঁকে দেড় লাখ টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই ব্যক্তি তথ্য দিচ্ছিলেন না, আবার টাকাও ফেরত দিচ্ছিলেন না। এ জন্য তাঁকে আটক করে কিছু টাকা আদায় করেছিলেন আমিরুল। তবে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়টি তাঁর জানা নেই।
মুস্তাফিজ হাসান প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেছিলেন, বিনা অনুমতিতে জেলায় কিংবা জেলার বাইরে ডিবির দল নিয়ে অভিযানে যাওয়ার সুযোগ নেই। কোথাও অভিযানে যেতে হলে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে যেতে হবে। আমিরুলের নেতৃত্বে ডিবির দলটি তাঁকে না জানিয়ে ঢাকায় গিয়ে অপরাধ করেছে। তবে মাত্রাগত দিক থেকে এটা ‘সামান্য অপরাধ’ বলেই মনে করেন তিনি।