ধুনটে অদম্য যমজ তিন ভাইয়ের মেডিকেলে পড়ার স্বপ্নপূরণ
বগুড়ার ধুনট উপজেলার বথুয়াবাড়ি গ্রামের যমজ তিন ভাই শাফিউল হাসান, মাফিউল হাসান ও রাফিউল হাসান। তাঁরা তিনজনই ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্টের অদম্য মেধাবী বৃত্তিপ্রাপ্ত। তাঁদের স্বপ্ন ছিল, তাঁরা তিন ভাই চিকিৎসক হবেন। গত বছর মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে সফল হন মাফিউল। এবার পরীক্ষা দিয়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন শফিউল ও রাফিউল।
পরিবারের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৯ সালে শাফিউল, মাফিউল ও রাফিউল যখন শিশুশ্রেণির ছাত্র, তখন তাঁদের স্কুলশিক্ষক বাবা গোলাম মোস্তফা মারা যান। চার ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে অথই সাগরে পড়েন তাঁদের মা আরজিনা বেগম। পাঁচ সন্তানের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে তাঁকে। আর্থিক কষ্টের মধ্যেও অদম্য যমজ তিন ভাই ২০২০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ধুনট এনইউ পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পান। তখন তাঁদের কলেজে পড়ার খরচের দায়িত্ব নেয় ব্র্যাক ব্যাংক ও প্রথম আলো ট্রাস্ট শিক্ষাবৃত্তির তহবিল।
প্রথম আলো ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ও বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই খবর অত্যন্ত আনন্দের। তবে আমি বেশি ধন্যবাদ জানাতে চাই এই তিন সন্তানের মাকে, যাঁর সর্বোচ্চ ত্যাগ ও চেষ্টায় সন্তানেরা এই সফলতা পেয়েছেন। প্রথম আলো ট্রাস্টের আর্থিক সহায়তায় এ রকম কিছু মেধাবী সন্তান যেন উঠে আসে, সেটাই আমাদের চাওয়া। এ লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
শাফিউল, মাফিউল ও রাফিউল বগুড়া সরকারি শাহ সুলতান কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়। ২০২২ সালে মাফিউল হাসান ও রাফিউল হাসান জিপিএ-৫ ও শাফিউল হাসান ৪ দশমিক ৯২ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। গত বছর মাফিউল হাসান ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটে ভর্তি হন। এবার রাফিউল হাসান নোয়াখালীর আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজে এবং শাফিউল হাসান দিনাজপুরের এমএ আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
তিন যমজের মা আরজিনা বেগম বলেন, ‘স্বামীকে হারিয়ে সংসার ও পাঁচ সন্তানের দায়িত্ব পালন করতে অনেক দুঃখ-কষ্টে কেঁদেছি। সংসারের চাপে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে বড় ছেলে। মেয়েটির লেখাপড়ার খরচ জোগাতে পারিনি। যমজ তিন সন্তানকে যখন কলেজে ভর্তি করতে পারছিলাম না, তখন প্রথম আলো আমার ছেলেদের দায়িত্ব নিয়েছে। আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এখন ভর্তি হতে পারলে আমার ছেলেরা ডাক্তার হবে। বড় আনন্দ লাগছে আমার।’
এদিকে তিন ভাই জানান, তাঁরা লেখাপড়া করে চিকিৎসক হয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন।
ব্র্যাক ব্যাংকের সহায়তায় ২০১০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এইচএসসি ও স্নাতক পর্যায়ে মোট ৯৯৩ জন শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছেন। ২০২৩ সাল থেকে প্রতিবছর ৫০ জন নারী শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা যাঁরা পুনরায় ভালো ফল করেন, তাঁদের স্নাতক শ্রেণি সম্পন্ন করা পর্যন্ত সহায়তা পান।
জানতে চাইলে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আর এফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, অদম্য তিন ভাইয়ের মেডিকেলে পড়ার সুযোগের খবরটি অত্যন্ত খুশির। ব্র্যাক ব্যাংক এ ধরনের উদ্যোগের সঙ্গে থাকতে পেরে গর্বিত। দেশের অনেক দরিদ্র মেধাবী ব্র্যাক ব্যাংক ও প্রথম আলো ট্রাস্টের এই শিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন।