মানুষের ভালোবাসায় বড় হচ্ছে বিক্রেতার কাছ থেকে উদ্ধার করা মাছরাঙার চারটি ছানা
একটি ছোট খাঁচার মধ্যে রাখা হয়েছে চারটি মাছরাঙার ছানা। খাচার ভেতরে হঠাৎ করে ডেকে উঠল ছানাগুলো। ওদের ক্ষুধা পেয়েছে বুঝতে পারেন সোহেল শ্যাম ও খোকন থৌনাজম নামের দুই ব্যক্তি। তখনই তাঁরা পাখির ছানাগুলোকে খাঁচা থেকে বের করে পরম মমতায় মুখে তুলে দিলেন চিংড়ি। মায়ের ভালোবাসা না পেলেও মানুষের ভালোবাসা পেয়ে ছানাগুলোও যেন আনন্দে ডেকে উঠল।
আজ রোববার বিকেলে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের বন্য প্রাণী রক্ষাবিষয়ক সংগঠন ‘স্ট্যান্ড ফর আওয়ার এনডেঞ্জারড ওয়াইল্ডলাইফের (এসইডব্লিউ) অস্থায়ী কার্যালয়ে গিয়ে এই দৃশ্য দেখা গেল। সংগঠনটির সমন্বয়ক সোহেল শ্যাম ও খোকন থৌনাজম এখন ছানাগুলোর দেখাশোনা করছেন। এর আগে গতকাল শনিবার এক পাখি বিক্রেতার কাছ থেকে মাছরাঙার চারটি ছানা উদ্ধার করেন রনি নামের এক অটোরিকশাচালক। ছানাগুলোকে উদ্ধারের জন্য নিজের পকেটে থাকা ৪০০ টাকা দিয়ে রনি পাখিগুলো কিনে নেন। পরে তিনি ছানাগুলো বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেন।
অটোরিকশাচালক রনির বরাত দিয়ে সোহেল শ্যাম বলেন, রনি যাত্রী নিয়ে গতকাল শ্রীমঙ্গলের নন্দরানী চা-বাগানে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে নন্দরানী চা-বাগানের রাস্তার পাশে মাছরাঙার ছানা বেচাকেনার দৃশ্য তাঁর চোখে পড়ে। পাখিগুলোকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানালেও পাখি বিক্রেতা রাজি হননি। পরে রনি নিজের টাকা দিয়ে ছানাগুলো কেনেন।
সোহেল শ্যাম বলেন, ‘গতকাল থেকে ছানাগুলোকে আমি আর খোকন দেখাশোনা করছি। তবে মাছরাঙা জীবিত মাছ ছাড়া খায় না। গতকাল বিকেল থেকে বিভিন্ন জায়গার মাছবাজারগুলো ঘুরে জীবিত ছোট মাছ পাইনি। তবে কিছু চিংড়ি এনেছি। আপাতত সেটা খাওয়াচ্ছি। জীবিত পোনা মাছ আনার জন্য কয়েকটি ফিশারিতে যোগাযোগ করেছি। তবে পাখির ছানা একসঙ্গে বেশি খাবার খায় না। একটা ছানা একটু উড়তে পারে। অন্যরা একদমই উড়তে পারে না। আমরা সাধ্যমতো ছানাগুলোর পরিচর্যার চেষ্টা করছি।’
বন বিভাগ ও এসইডব্লিউ সূত্রে জানা গেছে, উদ্ধার চারটি ছানা একদম ছোট। বয়স আনুমানিক ২০ দিন। যে ব্যক্তি পাখির ছানা বিক্রি করছিলেন, তাঁর পরিচয় পাওয়া যায়নি।
খোকন থৌনাজম বলেন, ‘যেকোনো বন্য প্রাণীই মায়ের কাছে যেভাবে ভালোভাবে বড় হবে, সেটা মানুষের কাছে হবে না। আমরা হয়তো বাচ্চাগুলোকে খাইয়ে বড় করে তুলতে পারব। কিন্তু মায়ের কাছে থাকলে পাখিগুলো তার বিপদগুলো সম্পর্কে ধারণা পেত, শিকার করা শিখতে পারত। তবে মানুষ এতটা অমানবিক কীভাবে হয়, বুঝি না।’
ছানাগুলোর বিষয়ে খোকন বলেন, উদ্ধার হওয়া ছানাগুলো ধলাগলা মাছরাঙা বা সাদা গলা মাছরাঙা। এর ইংরেজি নাম হোয়াইট থ্রোটেড কিংফিশার। এরা সাধারণত ২৮ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। প্রাপ্তবয়স্ক সাদা গলা মাছরাঙা পাখির মাথা ও ঘাড় গাঢ় বাদামি রঙের। পিঠ থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত উজ্জ্বল নীল। থুতনি, গলা ও বুকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ধবধবে সাদা। এরা মূলত জীবন্ত মাছ, ব্যাঙ, ছোট ইঁদুর ইত্যাদি খায়।
মৌলভীবাজার বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মাছরাঙার ছানাগুলো স্ট্যান্ড ফর আওয়ার এনডেঞ্জারড ওয়াইল্ডলাইফ সংগঠনের অস্থায়ী সেবাকেন্দ্রে আছে। বন বিভাগের পক্ষ থেকে নিয়মিত খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। ছানাগুলো অনেক ছোট। এখনো উড়তে পারে না। ছানাগুলো উড়তে শিখলে অবমুক্ত করা হবে।