সিলেটের বিশ্বনাথ
ঋণের নামে কৃষকদের টাকা নিয়ে লাপাত্তা
প্রতিষ্ঠানটি পৌর এলাকার চান্দশিরকাপন এলাকায় একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় কার্যক্রম চালাচ্ছিল। গত বুধবার থেকে সেখানে তালা ঝুলছে।
সিলেটের বিশ্বনাথে আবার ঋণ দেওয়ার নামে কৃষকদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বিশ্বনাথ উপজেলা ও পৌরসভা এলাকায় কয়েক শতাধিক কৃষক ও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ঋণ দেওয়ার নামে কয়েক লাখ টাকা সংগ্রহ করছিল ‘রাইজ এসেট ডেভেলপমেন্ট’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি গত বুধবার বিকেলের পর থেকে তালাবদ্ধ পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি পৌর এলাকার চান্দশিরকাপন এলাকায় একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় কার্যক্রম চালাচ্ছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্বনাথে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে রাইজ এসেট ডেভেলপমেন্ট নামে প্রতিষ্ঠান জনপ্রতি ১ হাজার ৫০ টাকা দিয়ে সদস্য হলে লাখ টাকার ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সদস্য সংগ্রহ করছিল। ঋণ নেওয়ার পর কিস্তি হিসেবে দুই বছর মেয়াদে পরিশোধের সুযোগের কথা বলছিলেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। সদস্য সংগ্রহের পর প্রতি এক লাখ টাকা ঋণের বিপরীতে আরও ছয় হাজার টাকা করে সঞ্চয় রাখার শর্ত দেওয়া হয়। অনেকেই শর্ত মেনে সঞ্চয়ের টাকা দেন।
তবে বুধবার বিকেল থেকে প্রতিষ্ঠানটি তালাবদ্ধ দেখতে পেয়ে গ্রাহকেরা বুঝতে পারেন, তাঁরা প্রতারিত হয়েছেন। খবর পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির ভবনের সামনে শতাধিক গ্রাহক ভিড় করেন। কোনো সুরাহা না পেয়ে তাঁরা ফিরে যান।
ভুক্তভোগীদের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে চান্দশিরকাপন এলাকার আনোয়ার খানের ঘর ভাড়া নেয় রাইজ এসেট ডেভেলপমেন্ট নামে প্রতিষ্ঠানটি। তাঁদের সাইনবোর্ডে প্রতিষ্ঠানটির নামের পাশে লেখা আছে রেজিস্ট্রেশন নং-এস ১২৪২/সি ৯২১৮৯/২২/সি ৭৮৪২৪/৫২। শাখা অফিস কোড: ১২২। প্রধান কার্যালয় সিটি সেন্টারের (উত্তর পাশে) রাইজ নিজস্ব ভবন দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল, ঢাকা-১২২৩। প্রতিষ্ঠানটির লোকজন প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে সদস্য সংগ্রহের কাজ করলেও তাঁরা প্রায় তিন মাস ধরে কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
প্রতারণার শিকার উপজেলার খাজাঞ্চি ইউনিয়নের তবলপুর গ্রামের হুছনা বেগম বলেন, প্রায় এক সপ্তাহ আগে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা পরিচয়ে একজন তাঁদের বাড়িতে গিয়েছিলেন। এ সময় ঋণগ্রহীতা হিসেবে তিনিসহ আরও ছয়জনের একটি গ্রুপ তৈরি করেন। প্রত্যেকের সদস্য ফরমের জন্য জনপ্রতি ১ হাজার ৫০ টাকা নেওয়া হয়।
পরবর্তী সময়ে ৭ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা বলে তাঁর কাছ থেকে আরও ৪০ হাজার টাকা নিয়েছে। বুধবার হুছনাকে ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বুধবার বিকেলে কার্যালয়ে গিয়ে সেটি বন্ধ পান। এদিন আরও অনেককে ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। ওই কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠানটির কারও উপস্থিতি না পেয়ে তাঁরা প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারেন।
বিশ্বনাথ বাজার এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল বাতেন জানান, প্রতিষ্ঠানটি থেকে ঋণ নিতে তিনিও প্রায় ১২ হাজার টাকা জমা দিয়েছিলেন। এভাবে তিন শতাধিক মানুষের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানটি ২০-২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এর আগে ১৯ ফেব্রুয়ারি বিশ্বনাথ পৌরসভার কালীগঞ্জ বাজারে ‘সমাজ কল্যাণ উন্নয়ন সংস্থা’ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান ঋণ দেওয়ার নামে কৃষকসহ বিভিন্নজনের থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকা সঞ্চয় হিসেবে সংগ্রহ করে পালিয়ে গিয়েছিল। এর ১০ দিনের ব্যবধানে একই পৌরসভা এলাকায় আরও একটি প্রতিষ্ঠান পালিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে বিশ্বনাথ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রমা প্রসাদ চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি অনেকে তাঁকে জানিয়েছেন। এর আগেও এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। এরপর সাধারণ মানুষের সতর্ক থাকা উচিত ছিল। ওই প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত নয় বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তবে এ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ দেননি। তবে পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে, জড়িত কাউকে পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আগের প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে ওসি বলেন, প্রতারণার পর আগের প্রতিষ্ঠানটির সবাই পালিয়ে গেছেন। ওই ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত চলছে। বুধবার বন্ধ হওয়া প্রতিষ্ঠানটিরও সবাই পালিয়ে গেছেন। সেখানে কেউ নেই।