২০ দিন ধরে মজুরি বন্ধ, চা-বাগানে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা

২০ দিন ধরে মজুরি বন্ধ থাকায় চা–বাগানে চলছে প্রতিবাদ মানববন্ধন। শুক্রবার সকালে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের কুরমা চা–বাগানে
ছবি: প্রথম আলো

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ন্যাশনাল টি কোম্পানির চা-বাগানে ২০ দিন ধরে মজুরি পাচ্ছেন না শ্রমিকেরা। মজুরি না পাওয়ায় অনেক কষ্টে দিনযাপন করতে হচ্ছে দিনমজুর এই শ্রমিকদের। মজুরির দাবিতে চা-বাগানের শ্রমিকেরা পরপর দুই দিন কর্মবিরতি পালন করে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করছেন।

আজ শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত উপজেলার কুরমা চা-বাগান কারখানার সামনে শ্রমিকদের কর্মসূচি পালিত হয়। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবারও এক ঘণ্টা কর্মবিরতি দিয়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ করেছিলেন তাঁরা। আজ মানববন্ধনে বক্তব্য দেন স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল হক, পঞ্চায়েত সদস্য নওশাদ আহমেদ, বালক দাস পাইনকা, চা শ্রমিক সন্ধ্যা বুনার্জি, প্রদীপ রজক, যোগেশ রজত, দিলীপ পাইনকা, চা-শ্রমিক নেত্রী গীতা রানী প্রমুখ।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া চা-শ্রমিকেরা বলেন, ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) মালিকানাধীন পাত্রখোলা, মদনমোহনপুর, চাম্পারায়, বাঘাছড়া, পদ্মছড়া চা-বাগানের শ্রমিকেরা ২০ দিন ধরে বেতন-ভাতা, রেশন ও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। কত কষ্ট করে প্রতিদিন শ্রমিকেরা কাজ করে যাচ্ছেন, কিন্তু মজুরি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। সোমবারের মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি দেওয়া না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন চা-শ্রমিকেরা।

মানববন্ধনে কুরমা চা-বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি নারদ পাসী বলেন, ২০ দিন ধরে শুধু মজুরি নয়, চা-বাগানের শ্রমিকদের রেশন ও চিকিৎসাসেবাও বন্ধ রয়েছে। হাসপাতালগুলোতে ওষুধ নেই। এ ছাড়া ১৫ মাস ধরে প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা দিচ্ছে না কোম্পানি। কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সবকিছু লুটেপুটে খেয়েছে। প্রতিদিন শ্রমিকেরা কাজ করেও মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অনেক দোকানি বাকি দিতে চাইছেন না। দ্রুত বকেয়া মজুরি দেওয়া না হলে আগামী সোমবার থেকে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

২০ দিন ধরে শুধু মজুরি নয়, চা-শ্রমিকদের রেশন ও চিকিৎসাসেবাও বন্ধ রয়েছে। শুক্রবার সকালে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের কুরমা চা–বাগানে প্রতিবাদ
ছবি: প্রথম আলো

চা-শ্রমিক সবিতা বাউরী বলেন, ‘ঘরে কোনো খাবার নেই, মজুরি বন্ধ দুই সপ্তাহের ওপরে। হাতে টাকাও নেই, পরিবারের লোকজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। আমরা খুবই কষ্ট করে জীবন চালাচ্ছি।’

আরেক শ্রমিক সাথী বিলাস বলেন, ‘মজুরি বন্ধ থাকায় বাগানের কোনো দোকানপাট থেকে বাকিতেও কোনো কিছু কিনতে পারছি না। এভাবে মজুরি বন্ধ থাকলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।’

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কুরমা চা-বাগানের ম্যানেজার ইউসুফ খান বলেন, কোম্পানির পরিচালনা পরিষদ ভেঙে গেছে। তাই সমস্যা হচ্ছে। পুনরায় পরিচালনা পরিষদ গঠিত হলে সমস্যা থাকবে না।

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বালিশিরা ভ্যালির সভাপতি বিজয় হাজরা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ন্যাশনাল টি কোম্পানির সব চা-বাগানেই মজুরি বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকেরা অনেক কষ্ট করে দিন পার করছেন। আগামী রোববার শ্রীমঙ্গলে বিভাগীয় শ্রম দপ্তরে এই বিষয়ে আমাদের বৈঠক আছে।’