সাবেক মন্ত্রীর ভাইয়ের বিরুদ্ধে জমি লিখে নিয়েও বিদ্যালয়ে চাকরি না দেওয়ার অভিযোগ
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ের চাকরির জন্য এক ব্যক্তি ৫৪ শতক জমি লিখে দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন। সাবেক মন্ত্রীর ছোট ভাই শামসুজ্জামান আহমেদকে এই জমি লিখে দিয়েও চাকরি না পেয়ে আজ রোববার জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন মো. মোহাইমেনুল হাসান নামের এক ব্যক্তি। তিনি বিদ্যালয়টিতে সাত বছর শিক্ষকতা করেছেন। তবে এমপিওভুক্তির সময় বাদ পড়েন।
সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। তাঁর মায়ের নামে কালীগঞ্জের তুষভান্ডারে ২০১৫ সালে করিমপুর নুরজাহান শামসুন্নাহার প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় হিসেবে এমপিওভুক্ত হওয়া বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটির সভাপতি নুরুজ্জামানের ছোট ভাই শামসুজ্জামান আহমেদ। প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের আওতায় পরিচালিত বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছেন শামসুজ্জামানের স্ত্রী জেসমিন আরা পলি।
জেলা প্রশাসক বরাবর দেওয়া লিখিত অভিযোগে মোহাইমেনুল হাসান উল্লেখ করেন, ২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর বিদ্যালয়টির জুনিয়র শিক্ষক (শরীর চর্চা) পদে যোগদানের জন্য মোহাইমেনুল হাসানকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। তবে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হলে তিনি ওই পদ থেকে বাদ পড়েন। তাঁর পদে ক্ষমতার অপব্যহার ও কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে রনজু মিয়া নামের অন্য এক শিক্ষককে নিয়োগ দেন শামসুজ্জামান আহমেদ।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, মোহাইমেনুল হাসান ২০১৭ সালে শিক্ষক হিসেবে পাওয়ার আগে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছোট ভাই শামসুজ্জামান আহমেদকে জমি লিখে দেন মোহাইমেনুলের বাবা আজিজুল ইসলাম। উপজেলার দলগ্রাম ইউনিয়নের শ্রীখাতা মোজার এই জমির পরিমাণ ৫৪ শতক।
আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মোহাইমেনুল হাসানকে বাদ দিয়ে অন্য একজনকে এমপিওভুক্ত করার পর তিনি শামসুজ্জামান আহমেদের সঙ্গে একাধিকবার দেখা করেছেন। চাকরি দিতে না পারায় জমিটি ফিরিয়ে দিতে অনুরোধ করেন। তখন তাঁকে বিভিন্নভাবে অপমান করেন ও হুমকি দেন।
মোহাইমেনুল হাসান বলেন, ‘আব্বার বয়স হয়েছে, উনি ওদের ক্ষমতার দাপটের কাছে অসহায়। আমি আব্বার অনুমতি নিয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এবং লালমনিরহাট জেলা সমাজসেবা অফিসারসহ দুদকে প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ করেছি। মিডিয়ার সহায়তা কামনা করছি। চাকরি হলো না, জমিটা ফেরত চাই।’
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেসমিন আরা পলি বলেন, ‘মোহাইমেনুল হাসান এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করত। তাঁর চাকরি কেন শেষ পর্যন্ত এমপিওভুক্ত হয়নি, সেটা কর্তৃপক্ষ (ম্যানেজিং কমিটি) বলতে পারবেন।’ তাঁর স্বামী বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি উল্লেখ করে বিস্তারিত জানতে চাইলে জেসমিন আরা কোনো জবাব না দিয়ে সংযোগ কেটে দেন।
শামসুজ্জামান আহমেদ সম্প্রতি রংপুরের একটি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার হন। ফলে তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।
জানতে চাইলে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগটি গুরুতর। খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।