‘আমি পরের বাড়ি কামলা দিই। ও (মনির) মসজিদে ইমামতি করে মাসে চার হাজার টাকা পেত। একটা টিউশনিও করত। যেদিন আমার কাজ থাকত না, সেদিন ওর কাছ থেকে টাকা নিতাম। আবার কখনো কখনো আমি ওকে দিতাম। খুব কষ্ট করে এ পর্যন্ত এসেছিল। এখন সব শ্যাষ।’
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার হলবাজার এলাকার একটি দোকানে বসে কথাগুলো বলছিলেন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মনির হোসেনের (২০) বাবা বিল্লাল হোসেন। তাঁদের বাড়ি কুমারখালী পৌরসভার খয়েরচারা এলাকায়।
বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমার কোনো অভিযোগ নেই। ওর কপাল এ পর্যন্তই লেখা ছিল।’ কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান, তাঁর ছেলে মনির খুব ভালো মানুষ ছিলেন। মাওলানা হতে চেয়েছিলেন। তবে তিনি চেয়েছিলেন, পড়াশোনা শেষ করে একটি চাকরি করবেন মনির। কষ্টের সংসারে হাল ধরবেন। ছোট ছেলে বলত, ‘ভাইয়া, একদিন চাকরি করে পাঞ্জাবি কিনে দেবে।’
জানা গেছে, মনির হোসেন কুমারখালী ফাজিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও আলিম শেষ করে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে ভর্তি হন। গত বুধবার দুপুরে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কে কুমারখালীর কালুরমোড় এলাকায় ড্রাম ট্রাকের সঙ্গে মাহিন্দ্রা গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ওই শিক্ষার্থীসহ শহিদুল ইসলাম নামের এক পুলিশ উপপরিদর্শক নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন সাতজন। মনির বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শেষ করে বাড়িতে ফিরছিলেন।
মনির পড়াশোনার পাশাপাশি কুমারখালীর তেবাড়িয়া তিন গম্বুজ মসজিদের ইমাম ছিলেন। মা মনজুরা খাতুন গৃহিণী। চার ভাইবোনের মধ্যে মনির বড়। ছোট দুই বোনের মধ্যে একজনের বিয়ে হয়ে গেছে। আরেক বোন রুমানা খাতুন দশম শ্রেণিতে আর ছোট ভাই হোসাইন প্রথম শ্রেণিতে পড়ে।
মনিরের বাবা বিল্লাল হোসেন বলেন, ১৬ শতাংশ জমির বসতবাড়িতে ছোট দুইখানা টিনশেড ঘর আছে। তা-ও কয়েক দিন আগে করেছেন। অল্প অল্প করে জমিয়ে যার অর্ধেক দিয়েছিলেন মনির। মাঠে কোনো জমি নেই। ইমামতি ও টিউশনি করে পড়াশোনার খরচ মিটিয়ে সংসারে সহযোগিতা করতেন মনির।
দুর্ঘটনার বিষয়ে বিল্লাল বলেন, ‘আমার কোনো অভিযোগ নেই। চাওয়া–পাওয়াও নেই। কপালে যা ছিল, তা–ই ঘটেছে। জুলুম করব না। কেউ (ট্রাকমালিক) স্বেচ্ছায় কিছু দিলে গ্রহণ করব। আজ বেলা ১১টার দিকে তেবাড়িয়া সামাজিক কবরস্থানে মনিরকে দাফন করা হয়েছে।’
খয়েরচারা গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী শফিকুল আলম বলেন, এলাকার সবচেয়ে ভালো ছেলে ছিলেন মনির। একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। খুব কষ্ট করে বড় হচ্ছিলেন। এলাকার সবাই তাঁদের পছন্দ করেন। সহযোগিতা করতেন। মনিরের মৃত্যুতে সবাই শোকাহত।