বেলাবতে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে জখম, সরকারি কর্মচারীসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নরসিংদীর বেলাব উপজেলায় ফলের দোকানে হামলা চালিয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে কুপিয়ে আহত করার অভিযোগে একজন সরকারি কর্মচারীসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে নরসিংদীর বেলাব সিআর আমলি আদালতে ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতার বড় ভাই ও ফলের দোকানের মালিক মো. আল আমিন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মাথায় ছয়টি সেলাই নিয়ে বর্তমানে বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ওই ছাত্রলীগ নেতা।
জানতে চাইলে আদালত পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দোলোয়ার হোসেন জানান, মামলাটি আমলে নিয়ে বেলাব থানার ওসিকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন আদালত। এই ঘটনার সত্যতা কতটুকু, তা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে পৌঁছার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত রোববার বেলা তিনটার দিকে বেলাব উপজেলার বেলাব বাজারের চৌরাস্তার মোড় এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। আহত ছাত্রলীগ নেতা হলেন উপজেলার বেলাব ইউনিয়নের মাটিয়ালপাড়া এলাকার মৃত আবু কাশেমের ছেলে ও সরকারি হোসেন আলী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ইয়াসিন মিয়া (২২)। অন্যদিকে অভিযুক্ত সরকারি কর্মচারী হলেন বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের অফিস সহকারী দেলোয়ার হোসেন ওরফে সোহেল (৬০)।
মামলার আসামিরা হলেন দেলোয়ার হোসেন (৬০), মো. রূপণ মিয়া (৩০), মো. খলিল মিয়া (৩৫), মো. শাহীন মিয়া (৩৫), মো. অপু মিয়া (২২), বিনয় মিয়া (২৩), শান্ত মিয়া (২০), শিহাব মিয়া (১৯), রিফাত মিয়া (২০) ও রনি মিয়া (২০)। তাঁদের বাড়ি উপজেলার বেলাব ইউনিয়নের চরবেলাব গ্রামে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৪-৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়েছে, গত রোববার বেলা তিনটার দিকে বেলাব বাজারের চৌরাস্তার মোড়ের ওই ফলের দোকানে দা, লাঠি, রড ও চাপাতি নিয়ে আসেন আসামিরা। এ সময় তাঁরা দোকানের মালিক মো. আল আমিনকে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে ছোট ভাই ইয়াসিন মিয়ার মাথার তালুতে চাপাতি দিয়ে কোপ দেন শান্ত। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাঁর গলায় পারা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করেন রিফাত। এ সময় রূপণ, খলিল, শাহীন ও অপু রড ও লাঠি দিয়ে তাঁকে উপর্যুপরি পেটান। এ ছাড়া হাতে থাকা ছুরি দিয়ে ইয়াসিনকে আঘাতের চেষ্টা করেন শিহাব। এ সময় ক্যাশে থাকা ৬৩ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন এবং প্রায় ২ লাখ টাকার ফল নষ্ট করেন তাঁরা। পরে তাঁরা চলে গেলে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় ইয়াসিনকে বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।
বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সৈয়দা তানজিনা হক জানান, ‘আহত অবস্থায় রোববার বিকেলে ইয়াসিন নামের একজনকে আমাদের হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাঁর মাথার ওপরের অংশে ছয়টি সেলাই লেগেছে। তিনি এখন হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।’
মামলার বাদী মো. আল আমিন বলেন, ‘ঘটনার দিন রাতেই বেলাব থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম আমি। কিন্তু পুলিশ মামলা না নেওয়ায় আজ আদালতে মামলা করতে বাধ্য হয়েছি। আমার ছোট ভাই ইয়াসিন মিয়া এখনো হাসপাতালে। তার অবস্থা ভালো নয়। অন্যদিকে আসামিরা এলাকায় ঘুরছে। আসামিদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’
মামলার প্রধান আসামি দেলোয়ার হোসেন সোহেল বলেন, ‘আমি, রূপণ আর খলিল মিলে তিন বছর আগে স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৩০ ফুট জমি কিনেছিলাম। ওই জমির মধ্যেই পড়েছে ফলের দোকানটি। তাঁরা দোকানটি ছাড়ছেনও না, এত দিন ধরে ভাড়াও দিচ্ছেন না। এসবের জের ধরেই গত রোববার ওই দোকানে হামলার ঘটনা ঘটে। তবে হামলার সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম না, ছিলাম ইউএনও কার্যালয়ে। আমাকে কেন প্রধান আসামি করা হলো, সেটাই বুঝতে পারছি না।’
জানতে চাইলে বেলাবর ইউএনও আয়েশা জান্নাত বলেন, ‘দেলোয়ার হোসেন আমার কার্যালয়ের একজন অফিস সহকারী। হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতার মাথায় ছয়টি সেলাই লাগার কথা শুনেছি, কিন্তু ওই দিন তো তিনি (দেলোয়ার হোসেন) অফিসেই ছিলেন। ওই ঘটনায় তাঁর জড়িত থাকার বিষয়টি আমি নিশ্চিত নই। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’