খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ওষুধ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার বেলা ১১টা থেকে কলেজের গেটের কাছে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছেন তাঁরা। শিক্ষার্থীরা হাসপাতালের পরিচালকের কার্যালয়ে তালা দিয়েছেন। ইন্টার্ন চিকিৎসকেরাও সেবা বন্ধ রেখে কর্মবিরতি পালন করছেন।
সোমবার রাত ৯টার দিকে ওষুধ কেনাকে কেন্দ্র করে ওষুধ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে খুলনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ শিক্ষার্থী ও ৯ ওষুধ ব্যবসায়ী আহত হন। এখন পর্যন্ত দোকান খোলেননি ওষুধ ব্যবসায়ীরা। আর ওই দিন থেকেই কর্মবিরতি পালন করছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসা পরিষদের সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় রাতে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু থানা অভিযোগকে মামলা আকারে গ্রহণ করেনি। কলেজ প্রশাসন বলছে, সাত দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু ঘটনা যত দেরি হয়, বিচার পাওয়ার প্রত্যাশা তত কমে যায়। এ কারণে শিক্ষার্থীরা হামলাকারী ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ক্লাস বর্জন করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে চিকিৎসাসেবা বন্ধ রেখেছে।
দুই পক্ষের এমন অবস্থানের কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ রোগীরা।
আজ বুধবার সকালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সুহাস রঞ্জন হালদার প্রথম আলোকে বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা কাজে ফেরেননি। তবে চিকিৎসায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না। অধিকাংশ ওষুধ হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। তাই রোগীদের ভোগান্তিও কম। হয়তো অল্প কিছু ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। হাসপাতালের সামনের দোকান বন্ধ থাকলেও আশপাশের বয়রা বা সোনাডাঙ্গা এলাকার সব ওষুধের দোকান খোলা আছে।
সকালে কয়েক ওষুধ ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হলে তাঁরা বলেন, তাঁরা কোনো ধর্মঘট পালন করছেন না। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, দোকান খুললে শিক্ষার্থীরা আবারও হামলা করতে পারেন। আজ বিকেলে ওই ঘটনায় দুই পক্ষকে নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেখ সালাউদ্দিন জুয়েলের বসার কথা আছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. রবিউল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের তিনটি দাবির মধ্যে একটি দাবি হলো ৭২ ঘণ্টার মধ্যে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুটি মডেল ফার্মেসি তৈরি করা। শিক্ষার্থীদের ওই দাবি মেনে নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফার্মেসি তৈরি করার জন্য ইতিমধ্যে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি কয়েক দিনের মধ্যে দরপত্র ডাকবে।
সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক সকালে প্রথম আলোকে বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে মেডিকেল কলেজের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করছে পুলিশ। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ দেবেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।
শিক্ষার্থীদের দাবি, হাসপাতালের সামনের বিপ্লব মেডিসিন কর্নার নামের একটি দোকানে ওষুধ কিনতে যান প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী। কিন্তু ওই দোকান থেকে ওষুধটির দ্বিগুণ দাম চাওয়া হয়। এটা নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে ওই শিক্ষার্থীকে মারধর করেন দোকানের কর্মচারীরা। পরে ওই শিক্ষার্থী হোস্টেলে এসে অন্যদের বিষয়টা জানান। পরে কয়েক শিক্ষার্থী মারধরের কারণ জানতে ওই দোকানে গেলে অন্য ব্যবসায়ীরা তাঁদের ওপর চড়াও হয়ে ব্যাপক মারধর করেন।
ওষুধ ব্যবসায়ীদের দাবি, ওই শিক্ষার্থী ৭০ টাকার ওষুধ কেনার পর মোট দামের ওপর ১০ শতাংশ কমিশন চেয়েছিলেন। তবে দোকানদার ওই কমিশন দিতে রাজি না হওয়ায় দুজন বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। পরে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা এসে ওই দোকানে ভাঙচুর চালান।