ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রবীণ ব্যক্তিকে মারধরের প্রতিবাদে সুনামগঞ্জে সমাবেশ
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রবীণ ব্যক্তিকে মারধরের ঘটনায় সুনামগঞ্জে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে পৌর শহরের আলফাত স্কয়ারে ‘প্রগতিশীল সংগঠনসমূহ’ ব্যানারে এই সমাবেশ হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার লোকজন অংশ নেন।
ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তির নাম অমর চাঁদ দাস (৭৯)। তিনি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার শ্যামারচর গ্রামের বাসিন্দা। ১৩ মার্চ হার্নিয়ার সমস্যা নিয়ে তিনি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি হন। ১৬ মার্চ তাঁর অস্ত্রোপচার করা হয়। ১৭ মার্চ রাতে তিনি কর্তব্যরত চিকিৎসকদের মারধরের শিকার হন বলে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়াকে লিখিত অভিযোগ দেন।
আজ দুপুরে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, অমর চাঁদ দাস মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক ও সুনামগঞ্জে সর্বজন শ্রদ্ধেয় মানুষ। দেশ ও মানুষের কল্যাণে তিনি কাজ করছেন ৫০ বছর ধরে। তিনি প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংগঠক ও সমাজসেবী হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে মানবসেবায় আছেন। ওসমানী হাসপাতাল ও কলেজে তিনি তাঁর মরণোত্তর চক্ষু ও দেহ দান করেন। তাঁর প্রতি চরম অমানবিক আচরণ ও শারীরিক নির্যাতনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান বক্তারা। এ বিষয়ে রোববার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলে সমাবেশে জানানো হয়।
সুনামগঞ্জের প্রবীণ রাজনীতিক ও জনউদ্যোগের আহ্বায়ক রমেন্দ্র কুমার দের সভাপতিত্বে ও জেলা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন প্রবীণ রাজনীতিক ও শিক্ষক চিত্তরঞ্জন তালুকদার, জেলা খেলাঘরের সভাপতি বিজন সেন রায়, সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি পঙ্কজ দে, জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি এনাম আহমেদ, সমাজকর্মী নির্মল ভট্টাচার্য, জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি গৌরি ভট্টাচার্য প্রমুখ।
অমর চাঁদ দাস হাসপাতালের পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, প্রস্রাবজনিত সমস্যায় তাঁর ক্যাথেডার লাগানো হলেও ১৭ মার্চ থেকে তিনি প্রস্রাব-সংক্রান্ত জটিলতায় কষ্ট পেতে থাকেন। এ অবস্থায় তিনি ১৭ মার্চ রাতে অসংখ্যবার কর্তব্যরত শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসক ও নার্সদের সহায়তা চান। কিন্তু কোনো সহায়তা পাননি। যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে একপর্যায়ে তিনি ওই শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসকের কক্ষে গিয়ে চিকিৎসা সহায়তা চান। এ সময় ওই নারী চিকিৎসক আরেকজন চিকিৎসক নিয়ে তাঁর শয্যার দিকে রওনা হন। পথিমধ্যে তিনি ওই নারী চিকিৎসকের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাদের মতো নাতিন আমারও আছে, তারা তোমাদের মতো এত অমানবিক নয়।’ এ কথা বলার পর ওই চিকিৎসকেরা চলে যান। কিছুক্ষণ পর একজন পুরুষ চিকিৎসক পুলিশ নিয়ে এসে তাঁকে শাসান। পুরুষ চিকিৎসক অমর চাঁদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে থাকেন বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগে বলা হয়, রাত দেড়টার দিকে অমর চাঁদকে ওই পুরুষ চিকিৎসক পাঁজাকোলা করে শয্যা থেকে চিকিৎসকের কক্ষের পাশে উঠিয়ে নিয়ে যান। সেখানে ১৫ থেকে ২০ জনের একটি দল তাঁকে কিলঘুষি মারতে থাকে। একপর্যায়ে তাঁরা তাঁর মুঠোফোনও কেড়ে নেন। পরে ওই সংঘবদ্ধ দলটি তাঁকে জোরপূর্বক কিছু বলিয়ে রেকর্ড করে নেয়। পরদিন ১৮ মার্চ বিকেলে ভয়ে তিনি হাসপাতাল ত্যাগ করেন।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিনি একজনকে দায়িত্ব দিয়েছেন।