প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের আশায় ইন্দুরকানি থেকে হাঁটা শুরু করেছেন প্রতিবন্ধী জাহিদুল
ডান পায়ে সমস্যার কারণে পা টেনে হাঁটেন জাহিদুল ইসলাম (৩২)। সহকারী শিক্ষক হিসেবে তিনি পিরোজপুরের ইন্দুরকানি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে কর্মরত। বিদ্যালয়টির এমপিওভুক্তির দাবি নিয়ে পদযাত্রা শুরু করেছেন জাহিদুল। ২৩৩ কিলোমিটার পথ হেঁটে তিনি গণভবনে যেতে চান। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পেলে তুলে ধরতে চান নিজের দাবির কথা।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে জাহিদুল ইসলাম ইন্দুরকানি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় থেকে পদযাত্রা শুরু করেন। দুপুরে তিনি পিরোজপুর শহরে এসে পৌঁছান। এখানেই রাত্রিযাপন শেষে তিনি আগামীকাল শুক্রবার আবার পদযাত্রা শুরু করবেন।
জাহিদুল ইসলাম বলেন, অনেক কষ্ট করে ইন্দুরকানি ডিগ্রি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেন। কিছুদিন বেকার থাকার পর কয়েকজন মিলে ২০১৮ সালে ইন্দুরকানি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। নীতিমালা মেনে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে স্বীকৃতির জন্য আবেদন করেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বিদ্যালয়টির প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে আধা সরকারি পত্র (ডিও লেটার) দেন। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ২১ জন শিক্ষক-কর্মচারী বিনা বেতনে ১৫৩ জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও সেবা করছেন। শিক্ষক-কর্মচারীরা চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
নিজের অর্থকষ্টের কথা তুলে ধরে জাহিদুল আরও বলেন, তাঁর একটি পা অচল ও একটি চোখ দৃষ্টিহীন। হাত দুটিও প্রায় অচল। ঘরে বৃদ্ধ বাবা শাহজাহান মোল্লা মানসিক রোগী। বাবা, মা, স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে। বাধ্য হয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষকতার পাশাপাশি একটি চায়ের দোকান দিয়েছেন।
ইন্দুরকানি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহাদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও সার্বিক খরচ মেটাতে না পারায় বিদ্যালয়টি প্রায় বন্ধের উপক্রম হয়েছে। বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে গেলে ১৫৩ জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এই বিদ্যালয়ের মতোই সারা দেশে কয়েক শতাধিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা কোনো ধরনের বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। তাই এই বিদ্যালয়গুলো দ্রুত এমপিওভুক্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
ইন্দুরকানি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুৎফুন্নেসা খানম বলেন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য ইন্দুরকানি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি শিক্ষক জাহিদুল ইসলামের পদযাত্রার সফলতা কামনা করেন।
পদযাত্রা কর্মসূচির বিষয়ে জাহিদুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার পিরোজপুর জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে রওনা হবেন। সেখানে বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারত করে পদ্মা সেতু পার হয়ে ঢাকায় গণভবনে যাবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা আছে। তাঁর দেখা পেলে তাঁর প্রতিষ্ঠানের মতো দেশের সব প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত করার দাবি জানাবেন।