রাজপথে মুখোমুখি নাবিল-শাহীন, যশোরে দুই পক্ষের পৃথক কর্মসূচি
যশোর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার আবার রাজপথে মুখোমুখি লড়াইয়ে নেমেছেন। আজ শুক্রবার বিকেলে ও সন্ধ্যায় পৃথকভাবে কর্মসূচি করে তাঁরা শক্তির মহড়া দেন। অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যোগ দেন। দুই নেতাই আগামী নির্বাচনে যশোরের ছয়টি আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে জয়ী করার আহ্বান জানান।
বিকেলে শহরের চৌরাস্তা মোড়ে শান্তি সমাবেশ করেন কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারী নেতা-কর্মীরা। অন্যদিকে সন্ধ্যার পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে চিত্রা মোড়ে দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা করেন শাহীন চাকলাদারের অনুসারীরা। দুটি অনুষ্ঠানেই একে অপরের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন নেতারা।
বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য ও ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিকেলে শহরের চৌরাস্তা মোড়ে উন্নয়ন ও শান্তি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। এতে নাবিলের অনুসারী নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশের প্রায় সব বক্তা যশোর-৩ আসনে আবার কাজী নাবিল আহমেদকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান। সভাপতির বক্তব্যে যশোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘দলের ভেতরে বিভক্তি থাকলেও নৌকা প্রতীকের প্রশ্নে আমরা ঐক্যবদ্ধ।’ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এ কে এম খয়রাত হোসেন বলেন, ‘দল ক্ষমতায় আসার পর অনেকেই অনেক সম্পত্তি, টাকার মালিক হয়েছেন। বড় হোটেলও বানিয়েছেন। কিন্তু নাবিল সৎ মানুষ। ক্লিন ইমেজধারী। তাঁকে আমরা আগামী নির্বাচনে সদর আসনে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী করব।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, ‘বিএনপি জ্বালাও-পোড়াও অনেক করেছে। ট্রেনে আগুন দিয়েছে। এবার আর সেই সুযোগ দেওয়া হবে না। সামনের জাতীয় নির্বাচনে যশোরের ছয়টি আসন আবার শেখ হাসিনাকে উপহার দেব।’ এ সময় নেতা-কর্মীদের যেকোনো প্রয়োজনে তিনি পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।
অন্যদিকে সন্ধ্যার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উপলক্ষে দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করে জেলা আওয়ামী লীগ। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার।
অনুষ্ঠানে কাজী নাবিলকে ইঙ্গিত দিয়ে শাহীন চাকলাদার বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা কিছু জনপ্রতিনিধি ও সংসদ সদস্যকে দেখছি, দেশের উন্নয়ন নিয়ে জনগণের কাছে বার্তা পৌঁছানোর বেলায় নেই। কিন্তু তাঁরা দলের নেতা-কর্মীদের সমালোচনার বেলায় আছেন। যাঁরা দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে অপপ্রচার করেন, তাঁদের চিহ্নিত করতে হবে। দল ক্ষমতায় থাকায় আওয়ামী লীগ করার লোকের অভাব নেই। সম্প্রতি আমরা দেখছি, কিছু জনপ্রতিনিধির কার্যক্রম আগের মতোই আছে। তাঁদের ধারণা, যেভাবে গত নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে সংসদ সদস্য হয়েছেন, এবারও সেভাবে নির্বাচিত হবেন।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক ওহিদুল ইসলাম তরফদার, সদস্য মোস্তফা আশীষ, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ফারিন রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
প্রসঙ্গত, ২৫ সেপ্টেম্বর শহরের চৌরাস্তা মোড়ে জেলার আট উপজেলার নেতা-কর্মীদের সমাগম ঘটিয়ে শান্তি সমাবেশ করে জেলা আওয়ামী লীগ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। জেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে সেই সমাবেশ হলেও মূলত সমাবেশে শাহীন চাকলাদার পক্ষের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তিন দিন পর আজ বিকেলে একই জায়গায় শান্তি সমাবেশের আয়োজন করেছে নাবিলের পক্ষটি। জেলা আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে হলেও সমাবেশে মূলত নাবিলের অনুসারী নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।