ময়মনসিংহে ঠিকমতো মজুরি না পাওয়ায় শ্রমিক সরদারকে হত্যার অভিযোগ
ময়মনসিংহ নগরীতে নির্মাণাধীন বহুতল ভবনে শ্রমিক সরদার রমজান আলীকে মাথা থেঁতলে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নরসিংদী থেকে আজ শনিবার সকালে অভিযুক্ত শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হয়।
নিয়মিত পারিশ্রমিক না দেওয়ায় শ্রমিক সরদারকে ওই শ্রমিক হত্যা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আজ দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) এম এম মোহাইমেনুর রশিদ।
ওই শ্রমিক সরদারের নাম রমজান আলী (২৪)। তিনি নীলফামারীর জলঢাকা থানার পূর্ব বড়গ্রাম গ্রামের রশিদুল ইসলামের ছেলে। প্রায় চার মাস ধরে ময়মনসিংহ নগরের নওমহল গরুর খোয়াড় মোড় এলাকায় নির্মাণাধীন একটি ভবনে তাঁরা কাজ করছিলেন। প্রায় ২২ জনের একটি দলের সরদার ছিলেন রমজান।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সব শ্রমিক একসঙ্গে সকালের নাশতা করেন। বেলা পৌনে তিনটার দিকে নির্মাণশ্রমিক সুজন মিয়া ১১তলা ভবনের তৃতীয় তলায় চাদর দিয়ে ঢাকা অবস্থায় রমজান আলীকে দেখতে পান। চাদর সরানোর পর রমজানের মাথা আঘাতপ্রাপ্ত দেখতে পান। তাঁর চিৎকারে অন্যান্য শ্রমিক সেখানে যান। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা রডও উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক ২০ নির্মাণশ্রমিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়, পরে তাঁদের রাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়।
ঘটনাটি চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করলে থানা–পুলিশ ও জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) যৌথ অভিযানে নামে। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পারে, শ্রমিকদের সঙ্গে মজুরি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল সরদার রমজান আলীর। সেখানে একজন শ্রমিক নিখোঁজও ছিলেন। নিহতের মুঠোফোন ও সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ ওই শ্রমিককে শনাক্ত করে। ঘটনার পর পালিয়ে যাওয়া শ্রমিকের নাম মো. আমিনুল ইসলাম (২৫)। তিনি নির্মাণাধীন ভবনে রডমিস্ত্রি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে তাঁকে আজ শনিবার সকাল সাতটার দিকে নরসিংদীর শাহপ্রতাপ মোড় এলাকার একটি ছাত্রাবাস থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আমিনুল রংপুর সদরের বানিয়াপাড়া মমিনপুর এলাকার মৃত সহিদার রহমানের ছেলে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমিনুল পুলিশকে জানান, গত অক্টোবর মাসে তিনি রংপুর থেকে ময়মনসিংহে এসে ভবনে রডমিস্ত্রি হিসেবে কাজ শুরু করেন। এই কাজে তাঁকে সহযোগিতা করার জন্য তাঁর শ্বশুর ও চাচা শ্বশুরকে তিনি সঙ্গে নিয়ে আসেন। প্রথম দুই সপ্তাহ তাঁদের নিয়মিত পারিশ্রমিক দেওয়া হলেও প্রায় দেড় মাস ধরে তাঁরা নিয়মিত পারিশ্রমিক পেতেন না। একপর্যায়ে তাঁর শ্বশুর ও চাচা শ্বশুর পারিশ্রমিক না নিয়েই গ্রামের বাড়ি ফিরে যান। এতে গ্রামের আত্মীয়স্বজনের কাছে তাঁর (আমিনুর) সম্মানহানি হয়। এ নিয়ে গতকাল দুপুর সোয়া ১২টার দিকে রমজানের সঙ্গে আমিনুরের বাগ্বিতণ্ডার এক পর্যায়ে লোহার রড দিয়ে রমজানের মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে তিনি পালিয়ে যান।
এ ঘটনায় নিহত রমজানের বড় ভাই রাশেদুল ইসলাম বাদী হয়ে আজ একটি হত্যা মামলা করেছেন। সেই মামলায় আমিনুলকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ বিকেলে আদালতে সোপর্দ করা হয় বলে জানান জেলা ডিবির ওসি মো. শহিদুল ইসলাম।