গাজীপুরে মহাসড়কে গাড়ি ও মানুষের চাপ, বাস না পেয়ে দুর্ভোগ

ঘরমুখী যাত্রীদের তুলনায় রাস্তায় খুবই কম বাস রয়েছে। বেশির ভাগ বাসই ঢাকা থেকে যাত্রী বোঝাই করে আসছে। ফলে গাজীপুরে বিভিন্ন এলাকায় বাস পাচ্ছেন না অনেক যাত্রী। আজ সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

ঈদের বাকি আর মাত্র এক দিন। গাজীপুরের অধিকাংশ পোশাক কারখানা ইতিমধ্যে ছুটি হওয়ায় অন্য কর্মজীবীদের সঙ্গে ঈদযাত্রায় পোশাকশ্রমিকদের ভিড় বেড়েছে পথে পথে। ঘরমুখী মানুষের তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা কম হওয়ায় অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে বিকল্প উপায়ে বাড়ি ফিরছেন। যাত্রাপথে যানজট, গরম আর বৃষ্টির দুর্ভোগ তাঁদের সঙ্গী হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গাজীপুরের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা দিয়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন অঞ্চলটির কর্মজীবী মানুষেরা। গত তিন দিনে অঞ্চলটির বেশির ভাগ কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি কারখানাগুলোও আজ ছুটি হবে।

আজ শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকাকে কেন্দ্র করে উভয় দিকে যানবাহনের কিছুটা ধীরগতি তৈরি হয়েছে। নবীনগর সড়কের জিরানী বাজার থেকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই পর্যন্ত যানবাহনগুলো থেমে থেমে চলাচল করছে। বাসস্ট্যান্ডগুলোয় যানবাহন ও যাত্রীদের বাড়তি চাপ থাকলেও গতকাল সকাল ১০টা পর্যন্ত গাজীপুরের মহাসড়কগুলোয় দীর্ঘ যানজটের পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে ধীরগতিতে চলছে গাড়ি। বাড়তি ভাড়ার চাপ ও যানবাহনের স্বল্পতার জন্য অনেক ঘরমুখী মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পিকআপ ভ্যান, ট্রাক ও বাসের ছাদে ভ্রমণ করছেন।

হাইওয়ে পুলিশ ও ঘরমুখী মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উত্তরবঙ্গগামী প্রচুর যানবাহন থাকলেও কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় বাসস্ট্যান্ড থেকে পর্যাপ্ত বাস নেই। ঢাকা থেকে বাসগুলো যাত্রী বোঝাই করে আসছে।

চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় দীর্ঘ সময় ধরে যানবাহনের প্রতীক্ষা করতে দেখা গেছে যাত্রীদের। আজ সকাল ১০ টার দিকে
ছবি: প্রথম আলো।

নওগাঁর মান্দা উপজেলার চৌবাড়িয়া এলাকার আবুল হাসানকে চন্দ্রা বাস কাউন্টারের সামনে বসে থাকতে দেখা যায়। তিনি বলেন, গতকাল শুক্রবার কারখানা ছুটি হয়েছে। যার কারণে আজ সকাল সাড়ে ছয়টায় চন্দ্রায় এসেছেন। কিন্তু প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোনো বাসে উঠতে পারেননি। এখন ঢাকা থেকে ফেরত আসা একটি গরুর ট্রাকে চড়ে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত যাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তিনি। সেখান থেকে আবার অন্য যানে বাড়ি পর্যন্ত যেতে হবে।

একই জেলা নিয়ামতপুর উপজেলার গয়েশপুর গ্রামের মেহেদি হাসান বলেন, ‘সড়কে গাড়ির অভাব নেই, কিন্তু গাড়ির চেয়ে মানুষের সংখ্যা আরও বেশি। এখন ভাড়া কমবেশি কোনো কথা না; একটা বাসে উঠতে পারাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত বাসে উঠতে না পারলে ট্রাক বা পিকআপে উঠতে হবে।’

আরও পড়ুন

অন্যদিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কেও একই অবস্থা। চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় যানবাহনের সংকটের কারণে মানুষ হাঁটছেন। মানুষের চাপের কারণে স্থানীয়ভাবে চলাচলকারী তাকওয়া পরিবহন ৪০০ টাকা ভাড়ায় ময়মনসিংহ পর্যন্ত যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন ঘরমুখী মানুষ।

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার কবির হোসেন বলে, ‘আমি একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। কয়েক মাস পর পরীক্ষা, এ জন্য আগেভাগে বাড়ি যাইনি। আজ সকালে বের হয়েছি, রাস্তায় মানুষের অনেক চাপ। অন্য সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছে। এখন গাড়ির মালিকদের সঙ্গে ভাড়ার বিষয়ে দর-কষাকষির কোনো সুযোগ নেই। যার থেকে যেমন পারছে নিচ্ছে, দেখার কেউ নেই।’

বাস না পেয়ে ঘরের ফেরার তাগিদে নারী-শিশুসহ যাত্রীরা উঠে বসছেন ট্রাক, পিকআপসহ বিকল্প যানে। আজ সকালে
ছবি: প্রথম আলো।

নাওজোড় হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, মহাসড়কে যানবাহনের চাপ থাকলেও কোথাও যানজট নেই। তবে চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় মানুষের ব্যাপক চাপ রয়েছে।

মহাসড়কের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় জেলা, হাইওয়ে ও জিএমপি পুলিশ একযোগে কাজ করছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুব আলম বলেন, গতকাল থেকে শিল্পকারখানা ছুটি হওয়ায় মহাসড়কে চাপ বেড়েছে। তবে কোথাও কোনো যানজট নেই। সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন আছে। বৃষ্টি শুরু হলেও যেন যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখা যায়, তার জন্যও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।