শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীর’ ব্যানারে চলছে নিষিদ্ধ ছাত্ররাজনীতি

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) দলীয় ব্যানারে রাজনীতি সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ আছে। তবে অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষার্থীদের কাছে বিভিন্ন কৌশলে ও নামে-বেনামে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছেন কয়েকটি ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’র ব্যানারে কিংবা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের নামে কর্মসূচি করে পরে সেগুলো দলের নামে প্রচার করা হচ্ছে। বিষয়টির সমালোচনা করছেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্টের পর ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধের দাবি উঠেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ নভেম্বর দলীয় ব্যানারে ‘আপাতত’ কার্যক্রম না চালাতে নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ।

তবে একাধিক সূত্রের দাবি, শাবিপ্রবিতে বর্তমানে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, জাতীয় ছাত্রদল (বামপন্থী), ইসলামী ছাত্র মজলিশ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, তালীমীযে ইসলামের সাংগঠনিক কার্যক্রম চলমান আছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এদের মধ্যে কিছু ছাত্রসংগঠন প্রত্যক্ষভাবে ভিন্ন নামে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে অস্তিত্বসংকটে ভুগছে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থে রাজনৈতিক কার্যক্রম তদারকির আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মোমিন উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে প্রশাসন দলীয় ব্যানারে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে নিষেধ করেছে। এরপরও সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে কর্মসূচি করে দলীয়ভাবে প্রচার করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। আমরা আশা করি, যাঁরা এ ধরনের কার্যক্রম করছেন, তাঁরা বিষয়টি খেয়াল রাখবেন। একই সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীর স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি তদারকি করবে।’

শাবিপ্রবি শাখা ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মী বলেন, পদপ্রত্যাশী নেতা-কর্মীরা কয়েকটি দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’র ব্যানারে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। কেউ কেউ বৃক্ষরোপণ, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, বইমেলা, রক্তদান কর্মসূচি, পরীক্ষার আগের রাতে উপহার বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করছেন। তবে কর্মসূচিগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে পরিচালনা করে পরে সেগুলো সংগঠনের কেন্দ্রীয় ফেসবুক পেজে ছাত্রদলের কর্মসূচি হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে।

বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন বলে জানিয়েছেন শাবিপ্রবি ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মনির হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী আদর্শের সবাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে কর্মসূচি করে দলীয় ব্যানারে প্রচার করার বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি করে থাকে, তাহলে সংগঠন সমালোচনার মুখে পড়বে। এ ব্যাপারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অন্যদিকে গত ২৬ নভেম্বর উপাচার্যের কাছে ‘ক্যাম্পাস সংস্কারের ৫২ দফা’ দাবির প্রস্তাবনা দিয়ে প্রকাশ্যে আসেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের শাবিপ্রবি শাখার সভাপতি-সেক্রেটারি। এর আগে থেকেই সংগঠনটি বিভিন্ন ব্যানারে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করেছে বলে জানান শিক্ষার্থীরা। প্রকাশ্যে আসার পর সংগঠনটি গত ২৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় সিলেটের একটি অভিজাত হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে। তবে শাখা ছাত্রদলের কোনো নেতা-কর্মী এতে অংশ নেননি।

এ বিষয়ে ছাত্রশিবিরের শাবিপ্রবি শাখার সভাপতি তারেক মনোয়ার বলেন, ‘আমরা ছাত্ররাজনীতি বন্ধ চাই না; বরং তা সংস্কার করা হোক। আমরা দখলদারি, চাঁদাবাজির বিপক্ষে। তবে প্রশাসন সাময়িক যে নির্দেশনা দিয়েছে, সেটার ব্যাপারে আমরা শ্রদ্ধাশীল। সব সময় আমরা প্রকাশ্যেই ছিলাম, আমাদের কমিটি সব সময় ছিল। এ জন্য ভিন্ন নামে কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করার প্রয়োজন নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও জাতীয় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর কার্যক্রমে গতিশীলতার উদ্যোগ নেই। বিশেষ করে ছাত্রদের আবাসিক হলগুলোতে আসন পুনর্বণ্টনের কারণে সংগঠনগুলোর কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে। এর ফলে কর্মিসংকটেও আছে এসব সংগঠন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘কর্মসূচিগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে করা হচ্ছে। আবার একই কর্মসূচিগুলো দলীয় নামে প্রচার করা হচ্ছে—এমন সমালোচনা সামনে এসেছে। যারা এসব কর্মসূচি করছেন, তাঁদের আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তাঁরা দলীয় ব্যানারে প্রচার করবে না—বলে জানিয়েছেন। আমরা এ ব্যাপারে তদারকি করছি।'