ঝিনাইগাতীতে নতুন করে ১০টি গ্রাম প্লাবিত, ঝিনাইগাতী-নালিতাবাড়ী সড়কে যান চলাচল বন্ধ

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় পাহাড়ি ঢলের পানির প্রবল তোড়ে বিধ্বস্ত কয়েকটি ঘর। শনিবার দুপুরে সদর ইউনিয়নের দীঘিরপাড় গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গত রাত ১২টার পর থেকে ভারী বৃষ্টি হয়নি। এতে মহারশী নদীর পানি সামান্য হ্রাস পেয়েছে। এরপরও এই সময়ে উজান থেকে পানি ভাটি এলাকায় নেমে আসায় উপজেলার হাতীবান্ধা ও মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় দুই হাজার মানুষ নতুন করে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সব মিলিয়ে উপজেলার ৫০টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়েছে। উপজেলায় পানিবন্দী প্রায় ৭ হাজার মানুষ।

এদিকে আজ শনিবার দুপুরে চেল্লাখালী নদীর পানির প্রবল তোড়ে ঝিনাইগাতী-তিনআনী-নালিতাবাড়ী সড়কের রানীগাঁও এলাকায় সড়কের একাংশ ভেঙে যাওয়ায় ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সূত্রে জানা গেছে, গত রাতে ভারী বৃষ্টি না হওয়ায় আজ সদর বাজার ও উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে পানি নেমে গেছে। পানিবন্দী পরিবারের সংখ্যাও কমেছে। তবে উজানে পানি নামায় আজ সকাল থেকে উপজেলার হাতীবান্ধা ইউনিয়নের হাতীবান্ধা পূর্ব পাড়া, ঘাগড়া কবিরাজপাড়া, ঘাগড়া পটোলপাড়া, ঘাগড়া মণ্ডলপাড়া, পুরুষোত্তমখিলা, বেলতৈল এবং মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের জুলগাঁও, বানিয়াপাড়া, হাঁসলিবাতিয়া ও রাঙ্গামাটিয়া গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের নিচু এলাকায় অনেক বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে এবং দুই হাজার মানুষ নতুন করে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

চেল্লাখালি নদীর পানির প্রবল তোড়ে ঝিনাইগাতী-তিনআনী-নালিতাবাড়ী সড়কের রাণীগাঁও এলাকায় বিধ্বস্ত সড়ক। শনিবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

আজ দুপুরে সরেজমিনে হাতীবান্ধা ইউনিয়নে দেখা যায়, পাগলারমুখ বাজার থেকে পশ্চিম বেলতৈল পর্যন্ত গ্রামীণ সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে এবং এলাকাবাসী পানির ওপর দিয়ে হেঁটে চলাচল করছে। বেশ কয়েকটি বাড়ির উঠানে পানি প্রবেশ করেছে।

এ সময় পশ্চিম বেলতৈল গ্রামের তারা মিয়া ও আবুল হোসেন এবং ঘাগড়া কবিরাজপাড়া গ্রামের কছিমউদ্দিন বলেন, তাঁদের বাড়িঘরে পানি ওঠায় দিনভর চুলা জ্বলেনি। তাঁরা শুকনা খাবার খেয়ে আছেন। ঝিনাইগাতীর সদর ইউনিয়নের মাটিয়াপাড়া গ্রামের জাহিদ হাসান বলেন, দুই দিন ধরে তাঁরা পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। কোনো সাহায্য পাননি।

শেরপুরের ঝিনাইগাতীর মালিঝিকান্দা ইউনিয়নে প্লাবিত জোলগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শনিবার বিকেলে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের রাঙ্গামাটিয়া গ্রামের মো. আশরাফ আলী বলেন, তিনি দুই একর জমিতে আমন ধান আবাদ করেছিলেন। ঢলের পানিতে পুরো আবাদ তলিয়ে গেছে। এখন সামনের দিনগুলোয় কীভাবে চলবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।
ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. জাহিদুল হক দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলের পানি নেমে মহারশী নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। এতে উপজেলা পরিষদ চত্বরসহ ঝিনাইগাতী বাজার ও সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়। এতে পরিষদের কার্যক্রম ব্যাহত হয় এবং ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই পাহাড়ি ঢলের ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য মহারশী নদীতে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

পাউবো শেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, মহারশী নদীর বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও নদীর খনন বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি প্রস্তাবনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দেওয়া হয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে এ বিষয়ে পাউবোর পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় দুই ব্যক্তি বন্যার পানি মাড়িয়ে বাড়ির বাইরে আসছেন। শনিবার দুপুরে সদর ইউনিয়নের মাটিয়াপাড়া গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, উজানে পানি সামান্য কমলেও ভাটি এলাকায় পানি বাড়ছে। আজ পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত ১ হাজার পরিবারের মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

এর আগে গতকাল শুক্রবার উপজেলার সদর বাজার ও উপজেলা পরিষদ চত্বরসহ ৪০ গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। অতিবৃষ্টি এবং মহারশী ও সোমেশ্বরী নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ঝিনাইগাতী সদর, ধানশাইল, গৌরীপুর ও হাতীবান্ধা ইউনিয়নের প্রায় ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। আমন ও সবজি আবাদ, অর্ধশতাধিক মৎস্য খামার, ঘরবাড়ি এবং গ্রামীণ সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নের খৈলকুড়া, দীঘিরপাড় ও পূর্ব দীঘিরপাড় এলাকার তিনটি স্থানে মহারশী নদীর বাঁধের ১৫০ মিটার অংশ ভেঙে যায়। আজ নতুন করে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় সব মিলিয়ে উপজেলার ৫০টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়েছে।