কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরীসহ তিন শিক্ষার্থী কারণ দর্শানোর (শোকজ) জবাব দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার একজন ও আজ বুধবার দুপুরে বাকি দুজন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে লিখিতভাবে জবাব দিয়েছেন।
এর আগে রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে গত ২৯ মার্চ দ্বিতীয়বারের মতো ওই তিনজনকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাত দিনের সময় দিয়ে কারণ দর্শানোর সময় বেঁধে তাঁদের কাছে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে হালিমা আক্তার ওরফে ঊর্মি কারণ দর্শানোর জবাব দিয়েছেন। সানজিদা চৌধুরী ওরফে অন্তরা ও ইসরাত জাহান ওরফে মিম আজ বেলা একটার দিকে তাঁদের জবাব দেন।
এর মধ্য দিয়ে অভিযুক্ত পাঁচজনের সবার জবাব পাওয়া গেল বলে জানিয়েছেন আলী হাসান। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাস ছুটি। এ জন্য আগামী শনিবার ফাইল করে সেগুলো উপাচার্যের কাছে দেওয়া হবে। পরবর্তী সময়ে ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভা আহ্বানসহ সেখানে বিষয়গুলো উত্থাপনের জন্য বলা হবে। উপাচার্য তারিখ নির্ধারণ করলে সেই মোতাবেক কাজ করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয় ও একাডেমিক শাখা সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ মার্চ ছিল তাঁদের শোকজের জবাব দেওয়ার শেষ সময়। ওই দিন তাবাসসুম ইসলাম ও মুয়াবিয়া জাহান শোকজের জবাব দিয়েছিলেন। তবে ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী, হালিমা আক্তার ও ইসরাত জাহান নোটিশের জবাব দেননি। তাঁরা সময় বাড়ানোর আবেদন করেন। আবেদনে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন ও হাইকোর্টের নির্দেশনার কপি চান।
জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ওই তিনজনের কাছে পাঠানো নোটিশে উল্লেখ করেন, ওই তিন শিক্ষার্থীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন প্রশাসকের মতামতের ভিত্তিতে তাঁদের চাওয়া কাগজপত্র সরবরাহ করা গেল না। তবে ওই তিন শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিলে কেন চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, এ বিষয়ে লিখিত জবাব দেওয়ার জন্য আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময়সীমা বাড়ানো হলো।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ করেন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুন। নির্যাতনের সময় তাঁকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালিগালাজ এবং এ ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়। পরে এ বিষয়ে ফুলপরী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হলের প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।
ঘটনাটি নিয়ে দুটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ কয়েক দফা নির্দেশসহ আদেশ দেন। নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত বলে তদন্ত প্রতিবেদনে আসা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরীসহ পাঁচ ছাত্রীকে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে সাময়িক বহিষ্কার করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত। এ ঘটনায় হলের প্রাধ্যক্ষ শামসুল আলমকে প্রত্যাহার করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।