তরুণ প্রজন্মের মধ্যে শিকড়ের আনন্দ দিতে নবান্ন উৎসব
অগ্রহায়ণ মাস মানেই নতুন ধানের ঘ্রাণ। আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে পাওয়া চালের প্রথম রান্না ও পিঠাপুলি। গ্রামীণ সংস্কৃতির সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এ উৎসব এখন অনেকটাই ম্লান। তবুও ঐতিহ্য রক্ষায় প্রতিবছর আয়োজন হয় নবান্নের ঐতিহ্যবাহী উৎসব।
যান্ত্রিক জীবনে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে শিকড়ের আনন্দ ছড়িয়ে দিতে গত বছর থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নবান্ন উৎসবের আয়োজন হচ্ছে। এবার দ্বিতীয়বারের মতো আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে দুই দিনব্যাপী এ উৎসব শুরু হয়। রঙিন পোশাক, গান-বাজনাসহ উৎসবে যোগ দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পদাতিকের উদ্যোগে মুক্তমঞ্চের মাঠে এ উৎসব শুরু হয়। গত বছর ক্যাম্পাসে প্রথম এ উৎসবের আয়োজন শুরু করে পদাতিক। এরই ধারাবাহিকতায় এবার দ্বিতীয়বার আয়োজন করেছে। যেখানে পিঠাপুলিসহ ঐতিহ্যবাহী নানা পণ্য নিয়ে বসেছে স্টল। উৎসবে নবান্নের ঐতিহ্যকে ছবি, গল্প, গান ও কবিতায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
প্রথম দিন আজ সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ব্যান্ড দল বনসাই ও সপ্তর্ষি উৎসব মঞ্চে গান গাইবে। এ ছাড়া পদাতিকের অর্ধশত সদস্যের কোরাস গান, নাচ ও অভিনয় ছিল আজকের মূল আকর্ষণ। এবার মেলায় নাগরদোলাসহ ২৮টি স্টলে বাঙালির শাশ্বত ঐতিহ্যের হরেক রকম পণ্যের পসরা নিয়ে বসেন দোকানিরা। এসব স্টলে ভিড় করছেন শিক্ষার্থীরা।
আয়োজকেরা জানান, উৎসবের মাধ্যমে বাঙালির ঐতিহ্য সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে ধারণা দেওয়া সম্ভব। নবান্ন উৎসব একটি উদার, সর্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক উৎসব। এ উৎসব মূলত গণমানুষের উৎসব, খেটে খাওয়া মানুষের উৎসব। নবান্নের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে সম্প্রীতি আরও বাড়বে বলে তাঁরা আশা রাখেন। উৎসবের শেষ দিন আগামীকাল শুক্রবার রাতে বনসাই ও সপ্তর্ষি ব্যান্ড দলসহ দেশের স্বনামধন্য গায়ক অর্ঘ্য দেব গান গাইবেন বলেও জানান আয়োজকেরা।
আয়োজক সংগঠন পদাতিকের সভাপতি ভূমিকা সরকার প্রথম আলোকে বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ নতুন প্রজন্মকে নবান্নের ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে তাঁদের এ আয়োজন। উৎসবের মাধ্যমে নবান্নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনুষঙ্গ সাবলীলভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, নবান্নের ঐতিহ্য তুলে ধরতে বিভিন্ন অনুষঙ্গ তুলে ধরা হয়েছে, যা থেকে সহজেই একজন শিক্ষার্থী নবান্ন বিষয়ে ধারণা নিতে পারছেন। এ ধরনের উৎসব আয়োজন করায় তাঁরা অনেকে পদাতিককে ধন্যবাদ জানান এবং ধারাবাহিকতা রক্ষার আহ্বান জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ টি এম রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের এই সৃজনশীল আয়োজন খুবই উপভোগ্য। এর মাধ্যমে বাঙালির গ্রামীণ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে বর্তমান প্রজন্ম পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপনে এ আয়োজন ভূমিকা রাখছে।