প্রথমবার ট্রলারে ওঠে ওসমান, তারেকের সাগরে যাওয়ার কথা জানত না পরিবার

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গের বাইরে লাশের জন্য স্বজনদের অপেক্ষা। আজ সোমবার সকাল ১০টায়
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক উপকূলে ডুবন্ত একটি ট্রলার থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া ১০ জনের একজন মহেশখালীর ওসমান গনি। লাশ নিতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গের সামনে অপেক্ষা করছেন তার মা জহুরা বেগম।

আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালে গিয়ে কথা হয় জহুরা বেগমের সঙ্গে। মহেশখালীর শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামে তাঁদের বাড়ি। ওসমান (১৭) জীবনে কোনো দিন ট্রলার নিয়ে সাগরে নামেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সে (ওসমান) কক্সবাজার শহরের দোকানে চাকরি করত। পরে মহেশখালীতে গিয়ে দিনমজুর হিসেবে কাজ করত।’ তিনি বলেন, ৭ এপ্রিল স্থানীয় নুরুল কবির নামের এক ব্যক্তি ওসমানকে ট্রলারে তুলে সাগরে নিয়ে যায়। কেন নিয়ে গেল বুঝে আসছে না। জহুরার দাবি, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তিনি ছেলে হত্যার বিচার চান।

আরও পড়ুন

পুলিশ জানায়, গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক উপকূলে ডুবন্ত একটি ট্রলার থেকে অর্ধগলিত অবস্থায় ১০টি লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত ব্যক্তিরা মহেশখালী ও চকরিয়ার বাসিন্দা। ডুবে যাওয়া ট্রলারের মালিক মহেশখালীর বাসিন্দা সামশুল আলম। নিহত ১০ জনের মধ্যে সামশুল আলমও রয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত পুলিশ হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে পারেনি।

উপকূলে টেনে আনা ট্রলার থেকে লাশ উদ্ধারে অভিযান। রোববার দুপুরে কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক সমুদ্র উপকূলে
ছবি: প্রথম আলো

চকরিয়ার কোনাখালী থেকে মর্গে এসেছেন জসিম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি। ট্রলার থেকে উদ্ধার ১০ লাশের মধ্যে তাঁর ছেলে তারেক জিয়া (২৫) রয়েছে জানিয়ে জসিম উদ্দিন বলেন, ছেলে কেন ট্রলারে গেল জানেন না তিনি। তারেক এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করত। এক বন্ধুর কথায় সে স্টেশনে যাচ্ছে বলে ঘর থেকে বের হয়। এরপর কয়েক দিন খবর নেই। গতকাল রোববার বিকেলে খবর পেয়ে তিনি নাজিরারটেক উপকূলে গিয়ে লাশের সারিতে ছেলেকে শনাক্ত করেন। সেই থেকে হাসপাতালের মর্গে অবস্থান করছেন। কিন্তু ছেলের লাশ পাচ্ছেন না।

কীভাবে ছেলেকে চিনতে পারলেন জানতে চাইলে জসিম উদ্দিন বলেন, জন্মের পর থেকে তারেকের বাঁ হাতের আঙুল চারটি। পরনে ছিল কালো রঙের গেঞ্জি, ভেতরে ছিল স্যান্ডো গেঞ্জি। এগুলো এখনো আছে।

আরও পড়ুন

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, মহেশখালী ও চকরিয়ার অনেকে এসেছেন লাশ নিয়ে যেতে। কিন্তু অর্ধগলিত লাশগুলো পরিচয় যথাযথভাবে শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষা করতে হবে। এখন ময়নাতদন্তের সঙ্গে ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রতিবেদন হাতে না আসা পর্যন্ত লাশগুলো হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হতে পারে।

১০ জেলের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত হতে পারে উল্লেখ করে ওসি মো. রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ট্রলারের বরফ রাখার কক্ষ থেকে ১০ জেলের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশের মধ্যে তিনজনের হাত–পা রশি দিয়ে বাঁধা ছিল। কয়েকজনের শরীরে জাল প্যাঁচানো ছিল। একটি লাশের গলা থেকে মাথা ছিল বিচ্ছিন্ন। আরেকটি লাশের হাত বিচ্ছিন্ন পাওয়া গেছে। লাশগুলো ট্রলারের যে কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, সেই কক্ষের ঢাকনাও পেরেক দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছিল। তা ছাড়া ট্রলারের জাল ও ইঞ্জিন রয়ে গেছে। এ কারণে সন্দেহ হচ্ছে, হত্যাকাণ্ডটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটনে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।