বরিশাল সিটি নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী নিয়ে নানা জল্পনা

বরিশাল সিটি করপোরেশন

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তফসিল অনুযায়ী আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশনে ভোট গ্রহণ করা হবে। তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগসহ অন্য দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে নেমেছেন। আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছে ফরম বিক্রি শুরু করেছে। জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থীও মাঠে নেমেছেন। কিন্তু চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এখনো তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেনি।

ইসলামী আন্দোলনের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলটি অনেক আগেই দেশের অন্য চার সিটিতে তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। কিন্তু বরিশালে মেয়র প্রার্থী হিসেবে এখনো কাউকে চূড়ান্ত করা হয়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বরিশালে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মাওলানা উবাইদুর রহমান। কিন্তু এখন অনেকটা অসুস্থ হওয়ায় এবার তাঁর প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এ জন্য বিকল্প প্রার্থী দেবে দলটি।

দলীয় সূত্র জানায়, এবার বরিশাল সিটি করপোরেশনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে দলটি দুজনকে বিবেচনা করছে। তাঁরা হলেন কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন এবং বরিশাল জেলার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্র ও যুববিষয়ক সম্পাদক মুফতি সৈয়দ এছহাক মুহাম্মাদ আবুল খায়ের। মুফতি আবুল খায়ের চরমোনাই পীরের ছোট ভাই এবং চরমোনাই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান। মেয়র নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখে তাঁকে দল থেকে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। মনোনয়ন দেওয়া হয় তাঁর আরেক ছোট ভাই সৈয়দ মুহাম্মাদ জিয়াউল করিমকে। তিনি বর্তমানে ওই ইউপির চেয়ারম্যান।

দলটির নেতারা জানান, আশরাফ আলী দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে দলের ভেতরে বেশ জনপ্রিয় তিনি। এ ক্ষেত্রে দুজনই বরিশাল সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে শক্তিশালী প্রার্থী। তাঁদের দুজনের মধ্যে একজনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১৬ মে, বাছাই ১৮ মে, বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল ১৯ থেকে ২১ মে, আপিল নিষ্পত্তি ২২ থেকে ২৪ মে, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৫ মে। প্রতীক বরাদ্দ ২৬ মে এবং ভোট গ্রহণ হবে ১২ জুন।

আরও পড়ুন

বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় বরিশালে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী নিয়ে নানা জল্পনা ও আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে বরিশালে দলটির নিজস্ব ভোটব্যাংক আছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) নেতা মনীষা চক্রবর্তীকেও এগিয়ে রাখছেন কেউ কেউ। যদিও বাসদ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, সে ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিএনপির বাইরে এ দুই দলের ভোটব্যাংক এখন আওয়ামী লীগের অস্বস্তির কারণ। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী বা বাসদের প্রার্থী আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারেন। ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনে বাসদ ও ইসলামী আন্দোলন মেয়র পদে প্রার্থী দিয়েছিল।

আরও পড়ুন

সূত্রে জানা গেছে, বরিশালে ইসলামী আন্দোলনের নিজস্ব ভোটব্যাংক থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে। ওই বছর বরিশাল-৫ (সিটি করপোরেশন-সদর) আসনে ২৭ হাজারের বেশি ভোট পায় দলটি। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলটি এককভাবে ১৬০টি আসনে প্রার্থী দিয়ে সারা দেশে ৬ লাখ ৫৮ হাজার ২৫৪ ভোট পায়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়নি দলটি। সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে সব আসনে প্রার্থী দিয়ে আলোচনায় আসে দলটি। ভোট গ্রহণের দিন অনিয়মের অভিযোগ তুলে ফল বর্জনের ঘোষণা দিলেও সারা দেশে দলটি ১২ লাখ ৫৫ হাজার ৩৭৩ ভোট পায়। এরপর স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলটির প্রার্থীরা ভালো ভোট পান। গত ১৬ মার্চ পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও বরগুনার তালতলী উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের হারিয়ে তিনজন ইউপি চেয়ারম্যান পদে জয় পান। ভোটের মাঠে বিএনপির অনুপস্থিতিতে বরিশাল সিটি নির্বাচনে সুযোগ কাজে লাগাতে চায় দলটি।

আরও পড়ুন

ইসলামী আন্দোলনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আশরাফ আলী আকন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপি ভোটে না এলে অবশ্যই বিএনপির সৎ, আদর্শবান ভোটাররা আমাদের দিকে ঝুঁকবেন। পাঁচটি সিটিতে আমাদের প্রার্থীরা জয়ী হওয়ার মতো অবস্থায় আছেন। চার সিটিতে আমরা প্রার্থী দিয়েছি। বরিশালে এখনো দিইনি। সেখানে শক্তিশালী প্রার্থী দেব।’

নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার ব্যাপারে ইসলামী আন্দোলনের এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায়। তাই তারা চায় সবকিছু নিজেদের দখলে রাখতে। এ জন্য সুষ্ঠু ভোটের ব্যাপারে সন্দেহ আছে। তবে রংপুরের মতো প্রতিটি কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা দিলে এবং ভোট চুরি না করলে ইসলামী আন্দোলন কয়েকটি সিটিতে জয়ী হওয়ার মতো অবস্থায় আছে।

আরও পড়ুন