রাজশাহীর মোড়ে মোড়ে টুকিয়ে পাওয়া কোরবানির মাংসের বাজার
একদল নারী হাতে ব্যাগ ও পলিথিন নিয়ে ঘুরছিলেন। কোরবানির মাংসের আশায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছিলেন এ বাসা-ও বাসার সামনে। দুই-এক টুকরা মাংস পেলেই যত্ন করে সেগুলো তুলে রাখছিলেন ব্যাগে। গতকাল সোমবার দুপুরের পর রাজশাহী নগরের হোসনিগঞ্জ এলাকায় এ দৃশ্যের দেখা মেলে। নারীদের একজন জানালেন, তাঁদের নিজেদের কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য নেই। মানুষের বাসাবাড়িতে গিয়ে যা পান, তাই রান্না করবেন। আরেক নারী জানালেন, বাড়িতে রাখার পর অতিরিক্ত যা মাংস থাকবে, তা সন্ধ্যার দিকে বিক্রি করবেন।
নগরের রেলগেট, রেলওয়ে স্টেশন, বাস টার্মিনাল, দড়িখড়বোনা, ভদ্রা, লক্ষ্মীপুর, হড়গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় গতকাল বিকেল ও সন্ধ্যার দিকে বসে কোরবানির মাংসের বাজার। তবে এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় বাজার দেখা যায় রেলগেট এলাকায়। শহরের বিভিন্ন এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষ সারা দিন মাংস সংগ্রহ করে এনে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেন। অস্থায়ী এই মাংসের বাজার থেকে এসব মাংস আবার কিনে নেন নিম্ন আয়সহ কোরবানি না দেওয়া মানুষেরা।
এলাকাভেদে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা গরুর মাংস কিনছেন সাড়ে ৬০০ থেকে ৬৭৫ টাকায়। আর সেই মাংস আবার বিক্রি করছেন সাড়ে ৭০০ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া খাসির মাংস কেনা হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭২০ টাকায়। আর বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে সাড়ে ৮০০ টাকায়।
গতকাল সন্ধ্যায় নগরের রেলগেট এলাকায় দেখা যায়, কয়েকজন বিক্রেতা পরিমাপের জন্য ডিজিটাল স্কেল নিয়ে বসে আছেন। সারা দিন মাংস টুকিয়ে এনে এসব বিক্রি করছেন নারী ও অন্যরা। সেই মাংস আবার নিম্ন আয়ের মানুষেরাই কিনে নিচ্ছেন।
এই এলাকার মৌসুমি মাংস বিক্রেতা ফারুক হোসেন বলেন, এবার মাংস তুলনামূলকভাবে কম পাচ্ছেন তাঁরা। গতবারের চেয়ে তাই দামটাও একটু বেশি। মাংস কেনার পর ২০ থেকে ৩০ টাকা লাভেই দিয়ে দিচ্ছেন।
গতকাল মাগরিবের আজানের পর কথা হয় জুমেলা আক্তারের সঙ্গে। সন্ধ্যার আগে বাজারের ব্যাগে করে তিনি মাংস বিক্রি করতে এনেছেন। সেখান থেকে দেড় কেজির মতো মাংস বাড়ির জন্য রেখে বাকি তিন কেজি ৭০০ টাকা দরে বিক্রি করে দেন।
জুমেলা বলেন, সারা দিনে একরকম পুরো শহর মুখে কাপড় বেঁধে ঘুরেছেন। কেউ এক টুকরা, কেউ হাড্ডি, কেউ একটু বেশিই মাংস দিয়েছেন। সাড়ে চার কেজি মাংস পেয়ে তিনি খুশিই হয়েছেন। মোট ২ হাজার ১০০ টাকার মাংস বিক্রি করেছেন। এই টাকা থেকে মাংস রান্নার বাজার করে বাড়ি ফিরবেন।
নার্গিস আক্তার নামের এক নারী পবা উপজেলার নওহাটা থেকে গতকাল দুপুরে রাজশাহী এসেছেন মাংস সংগ্রহ করতে। তিনি সাড়ে তিন কেজির বেশি মাংস পেয়েছেন। বিক্রেতা তিন কেজির দাম দিতে চাইতেই তিনি বললেন, ‘আল্লাহর ওয়াস্তে এক পয়সাও কম দিয়েন না।’ নার্গিস প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা অসচ্ছল। অসুস্থ স্বামী আর দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার। কোরবানি দেওয়ার কথা চিন্তাও করতে পারেন না। তাই পাড়ার এক নারীর পরামর্শে শহরে এসে মাংস টুকিয়েছেন।
এই এলাকা থেকে চার কেজি গরুর মাংস কেনেন নগরের কাজীহাটা এলাকার রাব্বেল হক। তিনি এবার কোরবানি দিতে পারেননি। প্রথম আলোকে বলেন, আগামী দু-তিন দিন হয়তো গরু জবাই হবে না। কিন্তু মাংস তো দরকার। তাই সেখান থেকে কিনে নিচ্ছেন। দামটা অনেক। কিন্তু কোরবানির মাংস পাওয়া যাচ্ছে, এটাই বেশি।
নগরের শিরোইল বাস টার্মিনালের সামনে থেকে সাড়ে ৮০০ টাকায় খাসির মাংস কিনে খুশি দেখাল ক্রেতা রুবেল মিয়াকে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, খাসির মাংস পাওয়া যায় না। এখানে এসে ভালো মাংস পেলেন।
এখানকার মৌসুমি মাংস বিক্রেতা মো. মোস্তফা জানান, তাঁরা ঈদের দিন এমন কাজ করতে পেরে অনেক খুশি। সেই সঙ্গে ক্রেতা-বিক্রেতারাও খুশি। কোরবানির মাংস একটু হলেও সবার পাতে পড়ুক।