গাজী টায়ার্সের পোড়া ভবন থেকে হাড়গোড় ও মাথার খুলি উদ্ধারের দাবি স্বজনদের
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আগুনে পোড়া গাজী টায়ার্সের ছয়তলা ভবনটি থেকে মানুষের পোড়া হাড়গোড় ও মাথার খুলি খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন স্বজনেরা। অগ্নিকাণ্ডের সাত দিন পর রোববার বেলা তিনটায় আগুনে পোড়া ছয়তলা ভবনটির তৃতীয় তলা থেকে এসব হাড়গোড় ও মাথার খুলি উদ্ধার করা হয়। মানুষের সেসব দেহাবশেষ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, কারখানার প্রধান ফটকের সামনে একটি স্টিলের টেবিলের ওপর পোড়া হাড়গোড় সাজিয়ে রাখা হয়েছে। উৎসুক লোকজন সেসব হাড় দেখছেন। স্বজনদের কেউ কেউ সেখানে বিলাপ করছেন। এ সময় জেলা প্রশাসক গঠিত তদন্ত দলের সদস্যরা এলে তাঁদের ঘিরে ধরে স্বজনেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
উদ্ধার করা হাড় ও খুলি পুলিশ সুরতহাল করে ডিএনএ টেস্ট করবে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বুয়েটের বিশেষজ্ঞ মতামত হলো ভবনটিতে প্রবেশ করে উদ্ধারকাজ চালানো যাবে না। এ জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। কারখানার মালিক ভবনটি অপসারণের উদ্যোগ নিলে আমরা তাঁদের সঙ্গে সমন্বয় করব। তখন ভবনে কোনো দেহাবশেষ আছে কি না খুঁজে দেখব।’
এদিকে ভবন থেকে হাড় বের করার পর স্বজনেরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তাঁদের অভিযোগ, ফায়ার সার্ভিসসহ প্রশাসনের লোকজন উদ্ধার তৎপরতায় গাফিলতি করেছেন। এ কারণে তাঁরা সাত দিনে একটি হাড়ও বের করতে পারেননি। অথচ স্বজনেরা কিছু সময়ের মধ্যেই এত হাড় খুঁজে পেয়েছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভবনটি অপসারণ করে নিখোঁজ ব্যক্তিদের দেহাবশেষ বের করার দাবি জানান তাঁরা।
কারখানার সামনে বিলাপ করছিলেন ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা শামসুন্নাহার। তিনি বলেন, আগুনে তাঁর দুই ছেলে শাহাদাত শিকদার (২৮), সাব্বির শিকদার (৩৫) ও মেয়ের জামাই জমির আলী (৩০) নিখোঁজ হন। সাত দিন ধরে প্রশাসনের কাছে বারবার ধরনা দিলেও তাঁরা লাশ বা দেহাবশেষ দিতে পারেননি। আজ কিশোর বয়সের তাঁর দুই স্বজন অন্যদের সঙ্গে কারখানার তিনতলায় উঠেছিল। তারা ভবনে কিছু পোড়া হাড়গোড় ও একটি মাথার খুলি পেয়েছে। পরে খুলিটি তারা বাড়ি নিয়ে যায়।
কারখানার পূর্বপাশে মৈকুলী এলাকায় ভাড়া থাকেন শামসুন্নাহার। তাঁর সঙ্গে ওই বাড়িতে গেলে দেখা যায়, পোড়া মাথার খুলি দেখতে লোকজন ভিড় করেছেন। বাড়িতে কথা হয় ওই দুজনের সঙ্গে।
তারা জানায়, আজ তদন্ত দলের গণশুনানিতে অংশ নিতে তারা কারখানায় যায়। বেলা দুইটার দিকে গণশুনানি শেষে তদন্ত দল ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। তিনটার দিকে নিরাপত্তারক্ষীদের ফাঁকি দিয়ে ২০ থেকে ২৫ জন লোক ওই ভবনে ঢুকে পড়েন। তখন তাঁদের সঙ্গে তারা দুজনও যায়। ভবনের তিনতলায় একটি মাথার খুলি ও পোড়া হাড়গোড় খুঁজে পায় তারা। পরে এলাকার শিক্ষার্থীরা তাঁদের কারখানা থেকে বের করে নিয়ে আসেন।
একজন বলে, ‘কেউ ভাইগো কোনো খোঁজ দিতাছে না। সবাই উঠতাছে দেইখা ভাইগো খুঁজতে আমি আর আমার চাচাতো ভাইও বিল্ডিংয়ে উঠি। তিনতলায় উঠে দেখি সব পুড়ে ছাই হইয়া গেছে। এক পাশে আগুন জ্বলতাছে। আমরা তখন আরেক পাশে যাই। হাঁটার সময় পায়ের নিচে মর্মর শব্দ হইতাছিল। পরে ভালো কইরা চাইয়া দেখি অনেক হাড়গোড়। আমরা তখন ওইখান থেইকা একটা মাথার খুলি আর কিছু হাড় কুড়াইয়া নিই।’