গাজীপুরে দুটি কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভ, আজ বন্ধ ৬টি কারাখানা
হাজিরা বোনাস, বাৎসরিক বেতন বৃদ্ধিসহ বেশ কিছু দাবিতে আজ বুধবার সকাল থেকে গাজীপুরে দুটি কারখানায় শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করছেন। সকাল আটটার দিকে গাজীপুর নগরের কোনাবাড়ী এলাকায় যমুনা গ্রুপের একটি কারখানায় ও কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিচালা এলাকার পূর্বাণী গ্রুপের একটি কারখানায় শ্রমিকেরা বিক্ষোভ শুরু করেন।
এ সময় যমুনা গ্রুপের যমুনা ডেনিম গার্মেন্টস অ্যান্ড ওয়াশিংয়ের শ্রমিকেরা কোনাবাড়ী কাশিমপুর আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করেন। তবে পূর্বাণী কারখানার শ্রমিকেরা কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। শ্রমিক আন্দোলন শুরু হওয়ার পরে বেশ কিছুদিন কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে মালিকপক্ষ। এখনো ছয়টি কারখানা বিভিন্ন কারণে বন্ধ আছে।
শ্রমিক ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গাজীপুর নগরের কোনাবাড়ী এলাকায় একই কম্পাউন্ডের ভেতর যমুনা গ্রুপের যমুনা ডেনিম গার্মেন্টস অ্যান্ড ওয়াশিং কারখানার শ্রমিকেরা সকাল আটটায় হাজিরা দিয়ে কাজে যোগ দেন। কিছু সময় পর কাজ বন্ধ করে শ্রমিকেরা কারখানার সামনে অবস্থান করে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধিসহ বেশ কিছু দাবি নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময়ে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে কোনাবাড়ী–কাশিমপুর আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করেন। ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন ওই সড়কে চলাচলকারীরা।
খবর পেয়ে কোনাবাড়ী থানা পুলিশ ও গাজীপুর শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বোঝানোর চেষ্টা করে। পরে শ্রমিকেরা ১২টার দিকে আঞ্চলিক সড়ক থেকে সরে যান এবং যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে এ প্রতিবেদন লেখার সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শ্রমিকেরা কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছিলেন।
কারখানার শ্রমিক রাজিব হোসেন বলেন, ‘আমাদের আশপাশের সব কারখানায় শ্রমিকদের বেতন ভাতা বাড়ানোর হয়েছে। কিন্তু আমাদের বেতন ভাতা বাড়ানো হয়নি। হাজিরা বোনাস বাড়ানো হয়নি; এমনকি বাৎসরিক বেতনও বাড়ানো হচ্ছে না।’
আরেক শ্রমিক হাফিজ মিয়া বলেন, ‘আমাদের দাবিদাওয়া মেনে না নিলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’
কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, বেশ কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে যমুনা গ্রুপের শ্রমিকেরা সকাল থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন। কোনাবাড়ী কাশিমপুর আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করলে তাঁদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিচালা এলাকায় পূর্বানি গ্রুপের করিম টেক্সটাইলের শ্রমিকেরা হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল, বাৎসরিক বেতন বৃদ্ধিসহ প্রায় ২৬-২৭টি দাবি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় আজ সকাল থেকে ফের শ্রমিকেরা কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় তাঁরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন। তখন ঘটনাস্থলে থাকা শিল্প পুলিশ তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে রাখেন। শ্রমিকেরা কারখানার সামনেই অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সেনা সদস্যরা আসেন। তাঁরা মালিকপক্ষের সঙ্গে বসে শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে কথা বলেন।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম বলেন, পূর্বাণী গ্রুপের শ্রমিকেরা গত দুদিন বিক্ষোভ করছেন। আজ সকালে আবারও তাঁরা বিক্ষোভ শুরু করেন। তখন সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তারা মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করছে।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, ‘পূর্বাণী কারখানায় শ্রমিকদের নিয়ে আলোচনা চলছে। মালিকপক্ষ আন্তরিক; আশা করি সমাধান হয়ে যাবে। যমুনা গ্রুপের শ্রমিকেরা এখনো বিক্ষোভ করছেন। কীভাবে সমাধান করা যায় সে বিষয়টি দেখা যাচ্ছে।’
সারোয়ার আলম আরও বলেন, বিভিন্ন কারণে গাজীপুরের নয়টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। এর মধ্যে তিনটি কারখানা চালু হয়ে গেছে। আজও জেলার ছয়টি কারখানা বন্ধ রয়েছে।