যুক্তরাষ্ট্রে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছেলের মৃত্যু, কান্না থামছে না মা–বাবার
যুক্তরাষ্ট্রে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত দুই বাংলাদেশির মধ্যে আবু সালেহ মো. ইউসুফের (৪০) বাড়ি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায়। তবে তাঁর পরিবারের সদস্যরা সিলেট নগরের ইসলামপুর এলাকায় বসবাস করছেন। সালেহ প্রায় এক বছর আগে ভ্রমণভিসায় স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন। সেখানে যাওয়ার পর রাজনৈতিক আশ্রয় চান।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের বাফেলো শহরে স্থানীয় সময় গত শনিবার দুপুরে গুলিতে নিহত হন সালেহ। দেশে পরিবারের স্বজনরা তাঁর মৃত্যুর খবর জানতে পারেন পর দিন গতকাল রোববার সকাল আটটার দিকে।
ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর বাক্রুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বাবা নুরুল হক (৬৭)। ছেলে খুনের খবর পাওয়ার পর শোকে অনেকটা পাথর হয়ে গেছেন তিনি। আবু সালেহের মা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নাজিরা বেগমের (৫৬) কান্নাও থামছে না। স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বারবার ছেলের নাম ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠছেন তাঁরা।
নগরের ইসলামপুর এলাকার সৈয়দা মজিদা ভিলা নামের চতুর্থ তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় থাকেন নুরুল হকের পরিবার। ১৯৯৫ সালের দিকে কানাইঘাটের ঝিঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের তিনছটি গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলামপুরে পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করেন। তিনি সাবেক ইউপি সদস্য এবং ঝিঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত নুরুল হক।
আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নুরুল হকের বাড়িতে গিয়ে দরজার বাইরে থেকেই ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ পাওয়া যায়। দরজায় আওয়াজ দিলে প্রায় পাঁচ মিনিট পর এক নারী দরজা খুলে দেন। পরে বৈঠকঘরে আলাপ হয় সালেহের ছোট ভাই আবু তাহের মো. জুবায়েরের (৩৬) সঙ্গে। তিনি চাকরিসূত্রে ঢাকায় থাকেন।
জুবায়ের জানান, তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে সালেহ সবার বড়। ভাইবোনদের সবাই প্রতিষ্ঠিত। সালেহ দেশে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করতেন। পরে কিছু দিন সিলেটে মুঠোফোনের ব্যবসা করেছেন।
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সালেহ স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে ভ্রমণভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখানে যাওয়ার পর সম্প্রতি তিনি ওই দেশের ড্রাইভিং লাইসেন্সও পান। যুক্তরাষ্ট্রে নিহত হওয়া সালের স্ত্রী নুসরাত জাহান পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। স্বামী খুনের ঘটনার পর ভেঙে পড়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে থাকা স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাঁর দেখভাল করছেন।
ছোট ভাই আবু তাহের মো. জুবায়ের জানান, তাঁর ভাই সালেহ যুক্তরাষ্ট্রে ‘কনস্ট্রাকশনের’ কাজ করতেন। ঘটনার দিনও তাঁদের বাড়ির পাশে একটি ঘর মেরামত করার জন্য গিয়েছিলেন। সেখানে যাওয়ার পর দুর্বুত্তরা তাঁকে এবং তাঁর সঙ্গে থাকা আরেক বাংলাদেশিকে গুলি করেন। তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। জুবায়ের বলেন, স্থানীয় সময় সোমবার সকালে সালেহর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার কথা রয়েছে। পরে সেখানেই লাশ দাফন করা হবে। যদিও লাশ দেশে আনার ইচ্ছা ছিল পরিবারের সদস্যদের। কিন্তু বিষয়টি দীর্ঘ প্রক্রিয়া হয়ে দাঁড়াবে, সে জন্য আর সে প্রক্রিয়ায় যাওয়া হয়নি।
জুবায়েরের সঙ্গে আলাপকালে তাঁদের বাবা নুরুল হক বৈঠক ঘরের একটি সোফায় বসা ছিলেন। একপর্যায়ে তিনি ছেলে এবং যুক্তরাষ্ট্রে থাকা দুই নাতির কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। নুরুল হক জানান, সালেহর মৃত্যুর দুই দিন আগে সর্বশেষ তাঁর সঙ্গে কথা হয়। তখন তাঁদের টাকাপয়সা লাগবে কি না, তা সালেহ জানতে চেয়েছিলেন। মা ও বোনের সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই আলাপ করতেন সালেহ। নুরুল হক বলেন, তাঁর দুই নাতি ও অনাগত শিশুর জন্য এখন বেশি চিন্তিত তিনি। এ ছাড়া পুত্রবধূ বর্তমানে স্বামী ছাড়া নিজে এবং সন্তানদের কীভাবে সামলাচ্ছেন, এটি নিয়েও চিন্তার শেষ নেই তাঁদের।