বিদায়বেলায় গাড়ি চালিয়ে চালককেই বাড়ি পৌঁছে দিলেন জেলা প্রশাসক
চার দশক ধরে যশোরে দায়িত্বরত জেলা প্রশাসকদের গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছেন চালক হাবিবুর রহমান। অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়ার আগে তাঁকেই বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন বর্তমান জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আজাহারুল ইসলাম। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে যশোর শহরে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দেন জেলা প্রশাসক।
হাবিবুর রহমানের পৈতৃক বাড়ি যশোর শহরের মিশনপাড়া এলাকায়। গতকাল দুপুরে অবসরজনিত বিদায় সংবর্ধনা শেষে তাঁকে জেলা প্রশাসনের কার্যালয় চত্বর থেকে সেখানে পৌঁছে দেওয়া হয়। এ সময় জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম ছিলেন চালকের আসনে এবং গাড়ির ভেতরে প্রশাসক সাধারণত যে আসনে বসেন, সেখানে ছিলেন হাবিবুর রহমান।
এ ঘটনায় আবেগাপ্লুত হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘৪০ বছর ধরে আমি জেলা প্রশাসক স্যারদের গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছি। আজ (গতকাল) চাকরিজীবনের শেষ দিনে স্যার চালকের আসনে বসে নিজে গাড়ি চালিয়ে আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন। পরিবার ও প্রতিবেশীদের কাছে আমার সম্মান অনেক গুণ বেড়ে গেছে। অধস্তন কর্মীদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করতে হয়, সেটা ডিসি স্যারকে দেখে সবার শেখা উচিত।’
এ ঘটনাকে জীবনের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন হাবিবুর রহমানের স্ত্রী শেরিনা পারভীন। তাঁর ভাষ্য, ‘আনন্দে আমরা কেঁদে ফেলেছি। আমার স্বামী পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন করেন। আমাদের চাওয়া-পাওয়া খুব কম। অল্পতেই আমরা সবাই খুশি।’
হাবিবুর রহমান ১৯৮৫ সাল থেকে যশোর জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। প্রায় ৪০ বছর ধরে যশোরের জেলা প্রশাসকের গাড়ি চালিয়ে তিনি গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছেন। জেলার রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক ঘটনাবলির নীরব সাক্ষী হিসেবে তিনি পরিচিত। ২০২২ সালে জেলা পর্যায়ে শুদ্ধাচার পুরস্কারে ভূষিত হন হাবিবুর রহমান।
হাবিবুর রহমানের বিদায় সংবর্ধনায় দেওয়া বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, সততা ও নৈতিকতা প্রশ্নে আপসহীনতার যে দৃষ্টান্ত হাবিবুর স্থাপন করেছেন, তা সত্যিই বিরল। তিনি দীর্ঘ চাকরিজীবনে নিজেকে সততা ও কর্মনিষ্ঠার মূর্ত প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যক্তি ও চাকরিজীবনে হাবিবুর রহমানের আদর্শ অনুসরণের আহ্বান জানান তিনি।