হালদায় আবারও মা কাতলার মৃত্যু, দূষণ নিয়ে উদ্বিগ্ন গবেষকেরা
দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র চট্টগ্রামের হালদা নদীতে গত ১০ দিনে ৫টি বড় মা মাছ ও ১টি ডলফিন মরে ভেসে উঠেছে। আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে নদীর রাউজান অংশের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের আজিমের ঘাটে আরও একটি মা কাতলা মাছ মরে ভেসে ওঠে। মাছটির ওজন প্রায় ১৯ কেজি বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকারীরা।
মৎস্য অধিদপ্তর ও হালদার স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত শুক্রবার দুপুরে হাটহাজারী উত্তর মাদার্শা ইউনিয়নের কুমারখালী ঘাট এলাকা দিয়ে ভেসে যাওয়ার সময় নদীর স্বেচ্ছাসেবকেরা দুটি মরা মা কাতলা মাছ ডাঙায় তুলে আনেন। পরে বেলা তিনটায় উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবীরা মিলে একটি মাছ মাটি চাপা দেন। অন্যটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে পাঠানো হয়। গত মঙ্গলবার বিকেলে নদীর হাটহাজারী অংশের গড়দোয়ারা সিপাহীঘাট এলাকা থেকে ৯০ কেজি ওজনের একটি বড় ডলফিন মরে ভেসে ওঠে। গত বুধবার বিকেলে রাউজানের উরকিরচর ইউনিয়নের বাকর আলী চৌধুরী ঘাট এলাকায় একটি ১২ কেজি ওজনের মরা রুই মাছ ভেসে ওঠে। এক সপ্তাহ আগে একই ঘাটে মরা কাতলা মাছ ভেসে এলে সেটি ডাঙায় তুলে মাটি চাপা দেওয়ার কথা জানান উরকিরচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মুহাম্মদ কাউসার আলম।
এদিকে প্রজনন মৌসুমের শেষ হতে চলল প্রায়। এ সময় প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীতে একের পর এক এমন দুঃসংবাদে উদ্বিগ্ন নদী গবেষকেরা। তাঁরা বলছেন, গত তিন মাসে পুরোদমে ডিম ছাড়েনি মা মাছ। গত ৭ মে স্বল্প পরিমাণে ডিম ছেড়েছিল। সংগ্রহকারীরা আশায় ছিল বজ্র-বৃষ্টিতে পুরোদমে ডিম ছাড়বে। কিন্তু পরের দেড় মাসেও আর তা ঘটেনি।
স্থানীয় বাসিন্দা, হালদা নদীর স্বেচ্ছাসেবী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ দুপুর ১২টার দিকে ভাটার সময় নদীর রাউজানের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের আজিমের ঘাটে স্বেচ্ছাসেবক ও ডিম সংগ্রহকারী রোশাঙ্গীর আলম একটি মরা মা কাতলা মাছ ভেসে যেতে দেখেন। পরে তিনি সেটি ডাঙায় তুলে আনেন। এরপর উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় মৎস্য অধিদপ্তর ও হালদা গবেষণা কর্মীদের খবর দেন।
রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অংগ্যজাই মারমা প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ঘটনাস্থলে মৎস্য কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছেন। মাছটির মৃত্যুর কারণ এবং নদীদূষণের নানা তথ্য-উপাত্ত তাঁকে জানাতে বলেছেন। এরপর তিনি বিষয়গুলো নিয়ে ঊর্ধ্বতন মহলে প্রতিবেদন পাঠাবেন। গণমাধ্যমে তিনি জেনেছেন হাটহাজারী অংশের নদীদূষণের চিত্র ভয়াবহ, তবে তাঁর এলাকায় দূষণ নেই বললেই চলে। রাউজান অংশে হালদা শতভাগ সুরক্ষিত দাবি করেন তিনি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলার সহকারী পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার ও হাটহাজারীর ইউএনও এ বি এম মসিউজ্জামান বলেন, নদীদূষণের সরেজমিন চিত্র দেখতে তাঁরা আজ বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করবেন। এরপর তাঁরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
এদিকে নদী গবেষক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান মনজুরুল কিবরিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘হালদার মতো নদীতে যদি ১০ দিনে পাঁচটি মা মাছ আর ডলফিন একের পর এক মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে, তাহলে আমাদের আর বুঝতে বাকি থাকে না নদীর পরিবেশের অবস্থা। এটি মারাত্মক দুঃসংবাদ। তিনি মনে করেন নদীদূষণের ফলে এমনটা ঘটছে। তবে গত তিন দিন টানা বৃষ্টির কারণে দূষণের প্রভাব চিহ্নিত করা কঠিন হবে। কারণ, ভারী বৃষ্টিতে দূষণের উপকরণ পানিতে মিশে একাকার হয়ে যায়।