১৯টি কারখানা বন্ধ, নিম্নতম মজুরি ২৫ হাজার টাকাসহ নানা দাবিতে বিক্ষোভ
ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় শিল্পাঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতি গত কয়েক দিন অনেকটাই স্বাভাবিক থাকলেও আজ রোববার নিম্নতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা, হাজিরা, টিফিন, নাইট বিল বৃদ্ধির বাস্তবায়ন ও কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ঘোষণাসহ নানা দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকেরা।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৭-৮টি পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া আজও বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬–এর ১৩ (১) ধারায় ১৫টি কারখানা বন্ধ ও ৪টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ছিল।
আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ ও বিভিন্ন কারখানা–সংশ্লিষ্টরা জানান, আজ সকালে আশুলিয়ার বিভিন্ন কারখানায় উপস্থিত হন শ্রমিকেরা। আশুলিয়ার বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের জিরাবো, নরসিংহপুর, জামগড়া এলাকার উভয় পাশে অবস্থিত কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা কারখানায় কাজ বন্ধ রেখে হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল, নাইট বিল বৃদ্ধির বাস্তবায়ন না হওয়া, কারখানা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এসব দাবি পূরণের ঘোষণা না আসায় বিক্ষোভ করেন। এ ছাড়া ডেকো গ্রুপের কারখানার শ্রমিকেরা নিম্নতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। পরে কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা কারখানাসংলগ্ন সড়কে কিছু সময়ের জন্য অবরোধ করে বিক্ষোভ করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাঁদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ওই এলাকার ৭-৮টি তৈরি পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডেকো গ্রুপের এক শীর্ষ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে অনেকগুলো দাবি নিয়ে শ্রমিকেরা আন্দোলন করছিলেন। তাঁদের কাছে কিছুদিন সময় চাওয়ার পরও তাঁরা ফ্যাক্টরি থেকে বের হয়ে কাজ বন্ধ করে দেওয়া শুরু করেন। পরে মালিকপক্ষ বিজিএমইএর সঙ্গে আলোচনা করে শ্রমিকদের হাজিরা বোনাস ২২৫ টাকা বাড়িয়ে ৭২৫ টাকা করা হয়। এরপরও তাঁরা আন্দোলন অব্যাহত রাখলে হাজিরা বোনাস ৮০০ টাকা করে দেওয়া হয়। টিফিন বিল ২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করে দিই। নাইট বিলও বাড়ানো হয়।
তিনি বলেন, ‘এরপরও শ্রমিকেরা গত এক সপ্তাহ আগে থেকে কারখানা কর্তৃপক্ষের কয়েকজনের পদত্যাগসহ আরও কিছু দাবিতে আবারও আন্দোলন শুরু করেন। এখন তাঁরা ২৫ হাজার টাকা মাসিক বেতনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন। তাঁরা কর্মকর্তাদের আটকে রেখে আজই ২৫ হাজার টাকা বেতনের দাবি পূরণ করতে বলছেন। আজকে সকালে ফ্যাক্টরির স্টাফদের রোদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। এভাবে চললে আমরা কাজ করতে পারব না।’
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ধীরে ধীরে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল। আজ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা তাঁদের টিফিন, হাজিরা, নাইট বিল বৃদ্ধির দাবি পূরণ হওয়া নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো ঘোষণা দেয়নি এবং বাস্তবায়ন করেনি এ অভিযোগে কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেন। এ ছাড়া ডেকো গ্রুপের কারখানার শ্রমিকেরা নিম্নতম মজুরি ২৫ হাজার টাকার আজই ঘোষণা দেওয়ার দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেন। শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তবে সেটি একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এভাবে দাবি জানানো যুক্তিসংগত নয়।
আশুলিয়ার শিল্প পুলিশ-১–এর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল শনিবার নাসা গ্রুপের কারখানায় কিছু শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানানোর পর কারখানা বন্ধ রয়েছে। শারমিন গ্রুপের শ্রমিকেরা কারখানা থেকে সড়কে বের হন। তাঁরা বলছেন, তাঁদের দাবি মালিকপক্ষ মানেনি। মালিকপক্ষ বলছে, দাবি মানা হয়েছে। ডেকো গ্রুপের কারখানার শ্রমিকেরা মজুরি বৃদ্ধির জন্য বিক্ষোভ করেন।
তিনি বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ওই এলাকার ৭-৮টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬–এর ১৩ (১) ধারায় ১৫টি এবং ৪টি কারখানায় সাধারণ ছুটি রয়েছে।