রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল: গন্তব্যে যেতে দেরি, হচ্ছে নতুন সূচি

রেলপথের সংস্কার এবং ট্রেন চলাচলের গতি হালনাগাদ করার জন্য রেলওয়ের প্রকৌশল দপ্তরকে চিঠি।

ট্রেনপ্রতীকী ছবি

রেলপথের সংস্কারকাজসহ নানা কারণে সময়সূচি মেনে ট্রেন চালানো যাচ্ছে না। গন্তব্যে পৌঁছাতেও নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১০ থেকে ৩৫ মিনিট পর্যন্ত বেশি লাগছে। এতে যাত্রীদের যেমন বাড়তি সময় লাগছে, তেমনি ভোগান্তিও পোহাতে হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে ট্রেন চলাচলের সময়সূচি সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল। নতুন করে নির্ধারণ করা হবে সময়সূচি। রেলের ভাষায় একে ওয়ার্কিং টাইম টেবিল (ডব্লিউটিটি) বলা হয়। সর্বশেষ ওয়ার্কিং টাইম টেবিল কার্যকর হয় গত বছরের ১ ডিসেম্বর। এটি ছিল ৫৩তম ওয়ার্কিং টাইম টেবিল। ৫২তম টাইম টেবিল করা হয়েছিল চার বছর আগে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে।  

ভৈরব-ময়মনসিংহ ও টঙ্গী-ময়মনসিংহ সেকশনে বেশ কিছু অস্থায়ী গতি নিয়ন্ত্রণাদেশ দীর্ঘ সময় ধরে চলমান থাকায় এই রুটগুলোতে ট্রেন চলাচল মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
মো. শহিদুল ইসলাম, প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা, পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে

রেলপথের সংস্কার এবং ট্রেন চলাচলের গতি হালনাগাদ করার জন্য রেলওয়ের প্রকৌশল দপ্তরকে গত ২৮ আগস্ট চিঠি দিয়েছে প্রধান পরিচালন কর্মকর্তার (সিওপিএস) কার্যালয়। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, সুষ্ঠু ও সময়ানুবর্তিতা অনুযায়ী ট্রেন পরিচালনার জন্য একটি মানসম্মত সময়সূচি প্রণয়ন করা অপরিহার্য। এ জন্য ওয়ার্কিং টাইম টেবিল–৫৪ প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সময়সূচি নির্ধারণে পূর্বাঞ্চলের সব সেকশনের স্থায়ী গতি অর্থাৎ রেলপথের (ট্র্যাক) গতি হালনাগাদ করা অত্যন্ত জরুরি। বিভিন্ন সেকশনের রেলপথ, রেলওয়ে সেতুসহ নানা সংস্কারকাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং কিছু কিছু কাজ চলমান রয়েছে। যেসব সেকশনে অস্থায়ী গতি নিয়ন্ত্রণাদেশ রয়েছে এবং থাকবে, যা অস্থায়ীভাবে তিন মাসের মধ্যে প্রত্যাহার হবে না, তা টাইম টেবিলে অন্তর্ভুক্ত করে ট্রেন চলাচলের সময়সূচি নির্ধারণ করা হবে। কোন কোন পথে অস্থায়ী গতি নিয়ন্ত্রণাদেশ থাকবে, তা হালনাগাদ করে জানানোর অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।

রেলওয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টঙ্গী-ময়মনসিংহ ও ভৈরববাজার-ময়মনসিংহ সেকশনসহ কিছু সেকশনে অস্থায়ী গতি নিয়ন্ত্রণাদেশ রয়েছে। ফলে নিয়মিত সূচির বিপর্যয় ঘটে। সূচিবিপর্যয় এড়াতে নতুন সময়সূচি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

রেলওয়ের পরিবহন বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, সাধারণত তিন মাসের সময়সীমায় গতিবেগ স্বাভাবিকের তুলনায় কমিয়ে রাখা হলে সেটিকে অস্থায়ী গতি নিয়ন্ত্রণাদেশ বলা হয়। ময়মনসিংহ রুটসহ দেশের বেশ কিছু রুটে অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণাদেশ স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও বেশি হওয়ায় সূচি মেনে ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। রেলপথ ও রেলসেতুর সংস্কারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাড়তি সময় লাগবে। তাই সংশোধন করে নতুন করে সময় নির্ধারণ করা হবে। তখন যাত্রীদের ট্রেন চলাচলে আর ভোগান্তি থাকবে না, বিভ্রান্তও হতে হবে না।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর সময় মেনে ট্রেন চলাচলসহ সেবার সার্বিক মান বাড়াতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রেলের সূচিবিপর্যয় কমিয়ে আনা, টিকিট কালোবাজারি নিয়ন্ত্রণ, রেলের ব্যয় সংকোচন করে সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায়সহ রেলকে লাভজনক পর্যায়ে নেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। নতুন সময়সূচি প্রণয়নেও বিষয়গুলো গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, টঙ্গী-ময়মনসিংহ ও ভৈরববাজার-ময়মনসিংহ সেকশনের বেশ কিছু স্থানে অস্থায়ী গতি নিয়ন্ত্রণাদেশের কারণে তিস্তা, অগ্নিবীণা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, মোহনগঞ্জ, বিজয় এক্সপ্রেসের মতো আন্তনগর ট্রেনসহ প্রায় ২০টি ট্রেনের সূচি মেনে চলাচল করা সম্ভব হয় না।

টাইম টেবিলে নির্ধারিত স্থায়ী নিয়ন্ত্রণাদেশ লিপিবদ্ধ থাকলেও ছয় মাসের বেশি সময় ধরে অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণাদেশের কারণে ট্রেনগুলো নির্ধারিত সময়ের চেয়ে কয়েক ঘণ্টা বিলম্বে গন্তব্যে যাচ্ছে। আবার ফিরতি পথে সময়ক্ষেপণ হওয়ায় প্রারম্ভিক স্টেশন থেকেও অনেকগুলো ট্রেন ছাড়তে বিলম্ব হচ্ছে। বিলম্বের কারণে যাত্রীদের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হওয়ায় এসব ট্রেনে যাত্রী কমে যাওয়ার পাশাপাশি রেলের রাজস্ব আয়েও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ট্রেনগুলোর চলাচলে প্রকৃত সময় তুলে ধরে রেলের নতুন টাইম টেবিল প্রণয়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

রেলওয়ে থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম–আখাউড়া সেকশনে নাঙ্গলকোট–লাকসাম, মস্তাননগর–চিনকিআস্তানা লেনে গতি নিয়ন্ত্রণাদেশ থাকায় বাড়তি ২ মিনিট করে সময় লাগে। আখাউড়া–সিলেট সেকশনে বিভিন্ন লেনে ৯ থেকে ১৮ মিনিট পর্যন্ত অতিরিক্ত সময় লাগে ট্রেন চলাচলে। ঢাকা–নারায়ণগঞ্জ সেকশনে লাগে ৬ মিনিট। ভৈরববাজার–ময়মনসিংহ সেকশনে ৫ মিনিট, ভৈরববাজার–কিশোরগঞ্জ সেকশনে ১০ মিনিট, টঙ্গী–ময়মনসিংহ সেকশনে ৩৭ মিনিট পর্যন্ত বাড়তি সময় লাগছে ট্রেন চলাচলে।

নতুন সময়সূচি নির্ধারণের কাজ শুরু হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওপিএস) মো. শহিদুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গত বছর সময়সূচি নির্ধারণ করা হলেও তা বিভিন্ন কারণে বিঘ্নিত হচ্ছিল। রেলপথ, সেতু, স্টেশনের নির্মাণ, সংস্কারকাজসহ বিভিন্ন প্রকল্প চলমান থাকে। এসব উন্নয়নকাজ চলমান থাকায় ট্রেন চলাচলের গতি নিয়ন্ত্রণ করে প্রকৌশল দপ্তর। ভৈরব-ময়মনসিংহ ও টঙ্গী-ময়মনসিংহ সেকশনে বেশ কিছু অস্থায়ী গতি নিয়ন্ত্রণাদেশ দীর্ঘ সময় ধরে চলমান থাকায় এই রুটগুলোতে ট্রেন চলাচল মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। তাই সময়সূচিকে এখনকার উপযোগী করে নতুন টাইম টেবিল প্রণয়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।