স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা, এলাকাবাসীর বিক্ষোভ, সহানুভূতি জানাতে এসে লাঞ্ছিত শিক্ষক

কুষ্টিয়া জেলার মানচিত্র

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়পড়ুয়া এক ছাত্রীর লাশ নিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। আজ মঙ্গলবার বেলা পৌনে দুইটার দিকে উপজেলার কয়া ইউনিয়নের একটি এলাকায় শতাধিক মানুষ এ কর্মসূচিতে অংশ নেন। এ সময় সেখানে ছাত্রীর জানাজায় অংশ নিতে যান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। স্থানীয় লোকজন তাঁকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছেন।

মানববন্ধনে ছাত্রীর স্বজনেরা অভিযোগ করেন, গতকাল সোমবার বিকেলে বিদ্যালয়ের ছাদে বসে ধূমপানের অভিযোগ ওঠে পাঁচ ছাত্রীর বিরুদ্ধে। স্মার্টফোনে এই দৃশ্যের ভিডিও ধারণ করেন বিদ্যালয়টির দুজন শিক্ষক ও একজন আয়া। ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে শিক্ষকেরা তাঁদের কক্ষে ওই ছাত্রীদের দুই ঘণ্টা আটকে রেখে মারধর করে ব্যাগ কেড়ে নেন। এরপর টিসি (বদলির সনদ) ও অভিভাবকদের জানিয়ে দেওয়ার ভয় দেখান শিক্ষকেরা। সেই অভিমানে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে ওই ছাত্রী। আরেক ছাত্রী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। মানববন্ধন থেকে শিক্ষকদের শাস্তির দাবি করেন তাঁরা।

নিহত ছাত্রীর মামা বলেন, ধূমপানের দৃশ্য ধারণ করে ওই দুই শিক্ষক ও আয়া ছাত্রীদের আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা করবেন তিনি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত দুই শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রীদের কাছ থেকে সিগারেট খাওয়ার গন্ধ পাওয়া গিয়েছিল। এ জন্য তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে স্কুলব্যাগ কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করা হয়নি এবং কোনো ভিডিও ধারণ করা হয়নি।

এদিকে মানববন্ধন চলাকালে ছাত্রীর জানাজায় অংশ নিতে ওই এলাকায় যান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। শিক্ষক সেখানে পৌঁছালে কয়েকজন তাঁর দিকে তেড়ে যান। তিনি একাই সেখানে গিয়েছিলেন। উত্তেজিত লোকজন এ সময় তাঁকে মারধর করতে শুরু করেন। অন্তত সাত মিনিট ধরে তাঁকে এলোপাতাড়ি মারধর করেন তাঁরা। এ সময় সাদাপোশাকে থাকা কয়েকজন পুলিশ তাঁকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। মারধরের পর শিক্ষকের কপাল গড়িয়ে রক্ত ঝরতে দেখা যায়। পরে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।

প্রধান শিক্ষককে মারধরের বিষয়ে মারা যাওয়া ছাত্রীর নানা প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার এত সময় পার হলেও শিক্ষকেরা কোনো খোঁজ নেননি। মানববন্ধনের সময় প্রধান শিক্ষক এলে জনগণ মারধর করেছে। তিনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছেন।
আহত প্রধান শিক্ষক বলেন, সোমবার ঘটনার সময় তিনি উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ে ছিলেন। রাতে ফেরার পর ঘটনা জানতে পারেন। আজ সকালে বিদ্যালয়ে এসে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। দুপুরে মারা যাওয়া ছাত্রীর জানাজায় যান তিনি। কিন্তু এভাবে তাঁকে মারধর করা হবে, সেটি বুঝতে পারেননি তিনি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী এজাজ কায়সার বলেন, তিনি সকালে বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছেন। ভিডিও নয়, শিক্ষার্থীদের কথা রেকর্ডিং করেছিলেন শিক্ষকেরা। প্রধান শিক্ষককে মারধর ও ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনা দুঃখজনক।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আকিবুল ইসলাম বলেন, জানাজায় অংশ নিতে এলে একটি পক্ষ উসকানি দিয়ে প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলা চালিয়েছে। এ সময় সেখানে শতাধিক মানুষ ছিল। পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। এর আগেই তাঁকে মারধর করা হয়। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না। তাই মারধরের ঘটনা ঘটবে, এমন আভাস ছিল না। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।